গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উরুমিয়ার একটি বিপ্লবী আদালত মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— তারা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেশের বিভিন্ন সংবেদনশীল কেন্দ্রের গোপন তথ্য, ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেছিল। আদালত রায়ে জানিয়েছে, এসব কার্যক্রম ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে।
অভিযুক্তদের কার্যকলাপ
ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি নাসের আতাবাতি জানান, চারজন আসামি—
-
মোসাদের এজেন্টদের সঙ্গে জরুরি কনফারেন্স কলের জন্য বিশেষ সিম কার্ড সংগ্রহ ও বিশেষায়িত ফোন ক্রয় করেছিল।
-
রাজধানী তেহরান, উরুমিয়া, শাহরুদ ও ইসফাহানসহ বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে।
-
ইরানের সামরিক ঘাঁটি, দুর্গ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চিহ্নিত করে বিদেশে পাচার করেছে।
তারা এ কাজের বিনিময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করেছিল।
আইনি ভিত্তি
আদালত জানায়, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ‘শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ আইন’-এর ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী। এ ধারা অনুসারেই চারজনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
-
ইসরায়েল: এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তেহরান–তেলআবিব দ্বন্দ্ব যেহেতু দীর্ঘদিনের, তাই ইসরায়েলি পক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করতে পারে অথবা এটিকে ইরানের প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিতে পারে।
-
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো: ইরানে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলিত প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই তারা সমালোচনামুখর। অনেক সংগঠন মনে করছে, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হতে পারে।
-
পশ্চিমা দেশগুলো: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ আগে থেকেই ইরানের মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনা করছে। ফলে এ মামলার রায় তাদের বক্তব্যকে আরও জোরালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আঞ্চলিক প্রভাব
১. ইরান–ইসরায়েল দ্বন্দ্ব
এই রায় মূলত ইরানের ভেতরে ইসরায়েলি প্রভাব ও নাশকতার অভিযোগের সরাসরি প্রতিফলন। সাম্প্রতিক সময়ে গাজা যুদ্ধ, সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত—সব মিলিয়ে তেহরান–তেলআবিব সম্পর্ক চরম উত্তেজনাপূর্ণ। ফলে এ মৃত্যুদণ্ডের রায়কে দুই দেশের “ছায়াযুদ্ধ”-এর নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২. আঞ্চলিক মিত্রতা
ইরান দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। অন্যদিকে ইসরায়েল এ জোটকে “শত্রুতামূলক অক্ষ” বলে অভিহিত করে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা এই আঞ্চলিক মিত্রতার টানাপোড়েনকে আরও বাড়াবে।
৩. আন্তর্জাতিক কূটনীতি
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত এখন একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনের পর এবার ইরানের ভেতরেও উত্তেজনা বাড়ায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে এবং নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।
সার্বিক চিত্র
ইরানে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে বার্তা দেওয়া হলো যে, তেহরান ইসরায়েলের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে কোনোভাবেই পিছু হটবে না। তবে মানবাধিকার ইস্যু
পাঠকের মন্তব্য