বাংলাদেশ সরকার জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অভিজ্ঞ কূটনীতিক তারেক মো. আরিফুল ইসলামকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূতের পদটি শূন্য ছিল। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, রাষ্ট্রদূত আরিফুল ইসলাম ইতোমধ্যে জেনেভা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যোগদান করেছেন।
পূর্ববর্তী দায়িত্ব ও কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা
তারেক মো. আরিফুল ইসলাম গত বছরের জুনে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হন।
এর আগে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন—
-
শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে,
-
নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপস্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে,
-
কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে,
-
সর্বশেষ ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে।
শিক্ষাজীবন ও বিশেষ দক্ষতা
-
বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন।
-
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
-
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে কূটনীতি ও বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
-
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মানবাধিকার এবং অভিবাসন বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বের গুরুত্ব
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব কূটনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর একটি। পাশাপাশি শ্রমবাজার, মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নীতিগত সম্পর্ক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তারেক মো. আরিফুল ইসলামের দায়িত্ব হবে—
-
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা,
-
অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি,
-
অভিবাসন ও শ্রম বাজার বিষয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করা,
-
এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করা।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা
কূটনৈতিক মহলের মতে, আরিফুল ইসলামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং জাতিসংঘভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে। তবে একই সঙ্গে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী রাজনীতি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, বাণিজ্য সুবিধা (GSP), রোহিঙ্গা সংকটসহ একাধিক জটিল ইস্যুতে কূটনৈতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাশা, ওয়াশিংটনে তাঁর সক্রিয় পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
পাঠকের মন্তব্য