আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি চালানে মোট ৬০ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। পেঁয়াজ আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চালান ও আমদানি প্রক্রিয়া
১. প্রথম চালান: ২৫ আগস্ট, ১৫ টন পেঁয়াজ
২. দ্বিতীয় চালান: ২৮ আগস্ট, ৩০ টন পেঁয়াজ
৩. তৃতীয় চালান: ১ সেপ্টেম্বর, ১৫ টন পেঁয়াজ (খালাস নেওয়া হবে ২ সেপ্টেম্বর)
এসব চালান ভারত থেকে ট্রাকের মাধ্যমে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো বাগেরহাটের এসএম ওয়েল ট্রেডার্স, আর রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের ন্যাশনাল ট্রেডিং করপোরেশন। কাস্টমস হাউজে এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে সি অ্যান্ড এফ লিংক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপসহকারী শ্যামল কুমার নাথ জানিয়েছেন, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসএম ওয়েল ট্রেডার্স ৪৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। মান পরীক্ষা শেষে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, “আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে। পেঁয়াজের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বাজারে প্রভাব
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
-
প্রতি টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য: ৩০৫ ডলার
-
বাংলাদেশি টাকায় মূল্য: প্রায় ৩৭,৪২৯ টাকা
-
প্রতি কেজি আমদানি মূল্য: প্রায় ৩৮ টাকা
-
বিক্রির বাজারমূল্য: মানভেদে ৫৭–৬০ টাকা
বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে নিম্ন আয়ের মানুষও সহজে পেঁয়াজ কিনতে পারবে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর জানিয়েছেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আগে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ভারতও রফতানি বন্ধ করায় দেশে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছিল। সরকারের এই পুনরায় অনুমোদন বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ।
সরকারের ভূমিকা ও নীতি
সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। এর জন্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের মূল কারণগুলো হলো:
-
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় কম ছিল।
-
ভারতীয় রফতানি বন্ধ থাকার কারণে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
-
কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছিল।
-
নিম্ন আয়ের মানুষ অতিরিক্ত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছিল।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য বিদেশি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
-
সরাসরি প্রভাব: দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি, দাম নিয়ন্ত্রণ।
-
অর্থনৈতিক প্রভাব: আমদানিকরা এখন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করে লাভ উপার্জন করতে পারবেন।
-
সামাজিক প্রভাব: নিম্ন আয়ের মানুষও সহজে পেঁয়াজ কিনতে পারবে।
-
লজিস্টিক প্রভাব: বেনাপোল বন্দরে আমদানি ও খালাস কার্যক্রম স্থানীয় অর্থনীতিকে উৎসাহিত করছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
সরকার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিলিতভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করবে। পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আমদানির মাধ্যমে বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখা হবে। এ ছাড়া, কাস্টমস ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্র পেঁয়াজের মান নিশ্চিত করবে।
এভাবে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পুনরায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও বাজার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
পাঠকের মন্তব্য