প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। তিনি বলেন, রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয়ে চ্যালেঞ্জ আগেও ছিল, তবে বর্তমানে এর মাত্রা বেড়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঝুঁকি, যা আগে কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি।
শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দুই দিনব্যাপী কোর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি। তিনি জানান, মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রতিরোধে কমিশন একটি কেন্দ্রীয় ডেটা সেল গঠন করবে এবং সেটিকে গ্রামাঞ্চল, চর ও পাহাড়ি এলাকায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুধু আইন ও বিধি জানলেই হবে না, বরং সততা, নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অপরিহার্য। তিনি প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই প্রশিক্ষণের ওপরই নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করছে। “পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা”—এই দুই বিষয়ই প্রশিক্ষণের মূল বার্তা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা হয়। সূচনা বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
বক্তৃতায় কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, এবারের নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অতীতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অপদস্ত করা হয়েছে এবং আরেকজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে তার মতে, ভবিষ্যতে দায় নির্ধারণের বিশ্লেষণ করা হলেও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের করণীয় হলো সংবিধান ও আইনের আলোকে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। সততা, নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করাই প্রকৃত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা, যার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে নির্বাচন সফল হবে। এ জন্য তাদের স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে—ভালো নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, কোনো ধানাইপানাই সহ্য করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্তমানে আদালতের আদেশে চাকরিতে ফেরত আসা ৬০ জন কর্মকর্তাকে কেবল পোস্টাল ব্যালটের কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয় সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিটি বুথে ভোটারের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে কমিশন ইতোমধ্যে প্রায় একশ’ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। ভবিষ্যতেও নির্বাচনী প্রতিটি ধাপে কৃচ্ছতা সাধন অব্যাহত রাখতে হবে।
পাঠকের মন্তব্য