![]()
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান—যা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বরং দেশের সামাজিক ও মানবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার এবং অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দिलीপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, চোরাচালিত মূল্যবান পণ্য ব্যবহার করে ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার ১৪ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে সিআইডির ফিন্যানসিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
বছরজুড়ে অনুসন্ধান, বেরিয়ে আসে বিস্ময়কর তথ্য
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, এলসি কাগজপত্র ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে উঠে আসে এমন কিছু তথ্য, যা কেবল আর্থিক নয়, বরং আইন-শৃঙ্খলা ও মানবিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সিআইডি জানায়, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ করে আসছিল। এই অবৈধ বাণিজ্যের আড়ালে উপার্জিত অর্থ বিভিন্নভাবে পাচার করা হয়েছে বলে সন্দেহ পাওয়া যায়।
এর ভিত্তিতে সোমবার রাজধানীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী-১৫)–এর ৪(২)(৪) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি গুলশান থানার নম্বর ৩০ হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
বৈধ আমদানি ছিল সীমিত, কিন্তু অস্বচ্ছ উৎসের স্বর্ণ–হীরা শতকোটি টাকার
তদন্তে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈধ এলসির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে আমদানি করে ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ১১ টাকার স্বর্ণ, অলংকার, লুজ ডায়মন্ড ও অন্যান্য পণ্য।
কিন্তু একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ‘ক্রয়-বিনিময় ও পরিবর্তন’ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় ৬৭৮ কোটি টাকার বেশি স্বর্ণ ও হীরা—যার উৎস সম্পর্কে কোনো ধরনের বৈধ নথি প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে পারেনি।
এই অস্বচ্ছ উৎস, আর্থিক অস্বাভাবিকতা এবং সম্ভাব্য চোরাচালানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এত বড় অঙ্কের চোরাচালান দেশের বৈধ ব্যবসা ও বাজারে অসাম্য তৈরি করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ভোক্তা, কারিগর ও খাত সংশ্লিষ্ট হাজারো পরিবার।
দায়বদ্ধতার দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের প্রত্যাশা
মানবাধিকার ও স্বচ্ছ অর্থনীতির পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, স্বর্ণ–হীরা চোরাচালানের মতো ঘটনাগুলো শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থায় আঘাত হানে না, বরং আইনের শাসন ও জনআস্থাকেও দুর্বল করে দেয়।
তাদের দাবি—এই মামলার তদন্ত যেন স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিচালিত হয়, যাতে এই খাতে বহুবছর ধরে চলা অনিয়ম ও পাচার চক্র ভেঙে দেওয়া যায়।
সিআইডি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সব নথি ও আর্থিক ট্রেইল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য