
২০০৫ সালে চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যাটারির মাত্র দুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। দুই দশক পরে, দেশটি বিশ্বের লিথিয়াম-আয়ন সেলের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি উৎপাদন করছে। কীভাবে এই অবিশ্বাস্য উত্থান সম্ভব হলো? বেইজিং কিভাবে বৈশ্বিক অটোমোবাইল শিল্পে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলো তা রীতিমতো চমকপ্রদ।
২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে, ক্রীড়াবিদ ও অতিথিদের পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিচালিত বাস। এটি ছিল চীনের ইভি ব্যাটারি শিল্প গড়ার প্রথম উদ্যোগ—যা দুই দশক পরে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছানোর ভিত্তি তৈরি করে।
২০০১ সালে অলিম্পিকের আয়োজক হওয়ার পর, বেইজিং ই-বাস প্রকল্প চালু করে। ২০০৩ সালের শেষের দিকে মো কে এবং তাঁর দল চীনের লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্প বিশ্লেষণ করেন। তখন দেশে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাটারি উৎপাদন করছিল। ২০০৫ সালে চীনের প্রথম লিথিয়াম ব্যাটারি সম্মেলনে উপস্থিতি ছিল মাত্র ২০০ জন।
বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ইভি ব্যাটারি প্রস্তুতকারক সিএটিএল তখন এটিএল নামে জাপানি সংস্থার একটি বিভাগ ছিল। আর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রস্তুতকারক বিওয়াইডি সদ্য অটোমোবাইল শিল্পে প্রবেশ করেছিল। দুই দশক পরে চীন এই শিল্পে নেতৃত্ব ধরে রেখেছে, যা ২০৫০ সালের নেট-জিরো লক্ষ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা চীনের সাফল্যের মূল কারণ হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করেন—বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, যা স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য সংরক্ষিত ছিল, এবং সরবরাহ চেইনের জন্য সমন্বিত সরকারি সহায়তা। সরকার গ্রাহক ভর্তুকি, চার্জিং নেটওয়ার্ক, ও ইভি উৎপাদনে বাধ্যতামূলক নীতি প্রণয়ন করে শিল্পকে ত্বরান্বিত করেছে।
চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ। সিএটিএল ও বিওয়াইডি–এর মতো প্রতিষ্ঠান “ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড” ব্যবসায়িক মডেল ব্যবহার করে, যা খরচ কমাতে এবং সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। সিএটিএল–এর ২০ হাজারের বেশি প্রকৌশলী ও বিওয়াইডির ১০ হাজারের বেশি কর্মী এই শিল্পকে শক্তিশালী করছে।
চীনের ব্যাটারি শিল্পের আধিপত্য বিশ্বব্যাপী। উড ম্যাকেঞ্জির গবেষণা অনুযায়ী, বৈশ্বিক উৎপাদন ক্ষমতার ৮৫ শতাংশই চীনের দখলে। অন্যান্য দেশ এই আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করতে পারে কেবল নতুন প্রযুক্তি, যেমন সলিড-স্টেট ব্যাটারির মাধ্যমে। তবে প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতে চীনের নেতৃত্ব অটুট।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের এই আধিপত্য কপি করা কঠিন। ব্যাটারি উৎপাদনের দক্ষতা, অভ্যন্তরীণ বাজার সুরক্ষা, সরকার-শিল্প অংশীদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন একত্রিত হয়ে চীনের ইভি ব্যাটারি শিল্পকে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের ব্যাটারিতে চীনের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করা খুবই কঠিন।
চীনের সাফল্য কেবল সরকারের নীতি নয়, বরং কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী শক্তি, উৎপাদন সক্ষমতা ও দক্ষ প্রকৌশলী প্রজন্মের একত্রিত ফলাফল। সাফল্য অর্জনের এই সমন্বিত পথ অন্য দেশগুলোর জন্য একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনের ইভি ব্যাটারি শিল্পকে দেখে বলা যায়—“তারা অনেক দূরে এগিয়ে গেছে।”
পাঠকের মন্তব্য