
চীনা বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও শিল্প সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের (সিইএএবি) সভাপতি হান কুন। তার মতে, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আরএমজি ও উৎপাদন খাতে চীনের ব্যাপক অংশগ্রহণ বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয় কমাচ্ছে এবং শিল্পায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করছে।
বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হান কুন বলেন, শুধু বিদ্যুৎ খাতেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে, যার ৫৪ শতাংশই চীনা প্রতিষ্ঠানের। তিনি জানান, চীনা কোম্পানিগুলোর অবদানেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা ২৭–২৮ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
হান কুন উল্লেখ করেন, চীনা বিনিয়োগ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নকে দ্রুততর করেছে, যার উদাহরণ পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বড় প্রকল্প। তার মতে, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমব্যয়, উন্নত অবকাঠামো ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ চীনা উৎপাদকদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
চীন–বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বাস্তবায়নকে রপ্তানিমুখী শিল্প সম্প্রসারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি। এফটিএ কার্যকর হলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি এনে বাংলাদেশে উৎপাদন করে বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি করতে পারবে।
তবে হান কুন সতর্ক করে বলেন, নীতিগত স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। হঠাৎ নীতি পরিবর্তন হলে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনি বিনিয়োগবান্ধব নীতি কাঠামো, স্বল্পব্যয়ী কাঁচামাল, উন্নত লজিস্টিকস এবং কার্যকর শুল্ক ও বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
সিইএএবির প্রায় ২৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক অবকাঠামো ও ৩০ শতাংশ আরএমজি/টেক্সটাইল খাতে কাজ করছে বলে জানান হান কুন। এসব প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং প্রযুক্তি উন্নয়ন ও রপ্তানিমুখী সাপ্লাই চেইন গঠনে অবদান রাখছে।
ভবিষ্যতে নতুন শক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, লজিস্টিকস এবং উৎপাদনসহ আরও বিভিন্ন খাতে চীন–বাংলাদেশ সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম প্রধান রপ্তানি ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সামর্থ্য রাখে।
পাঠকের মন্তব্য