![]()
১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে বলিউডের অন্যতম আলোচিত মুখ ছিলেন মহেশ আনন্দ। বড় পর্দায় যেভাবে শক্তিশালী চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, বাস্তব জীবনে ততটাই নিঃসঙ্গ ছিলেন তিনি। ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েন, ব্যর্থ বিয়ে এবং অবসাদ—সব মিলিয়ে তাঁর জীবন যেন এক করুণ চলচ্চিত্রের মতোই।
পর্দার খলনায়ক হিসেবে উত্থান
মহেশ আনন্দ প্রথম আলোচনায় আসেন ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করে। পরে ‘গুমরাহ’ ছবিতে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে কাজ করে আরও জনপ্রিয়তা পান। ৮০ ও ৯০-এর দশকে তিনি বলিউডের অন্যতম পরিচিত খলনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
কারাতে ব্ল্যাক বেল্টধারী মহেশ প্রথমে মডেলিং ও নাচের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮২ সালে ‘সনম তেরি কসম’ ছবির শিরোনাম গানে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে দেখা যায় তাঁকে। ১৯৮৪ সালে ‘করিশমা’ দিয়ে অভিনয়ে পা রাখলেও প্রথমদিকে তাঁর কাজ তেমন নজর কাড়েনি।
‘শাহেনশাহ’ এবং পরবর্তী ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’, ‘তুফান’—এসব ছবির মাধ্যমে তিনি বলিউডে নিজের অবস্থান মজবুত করেন। মোট প্রায় ৩০০ ছবিতে কাজ করেছেন মহেশ আনন্দ, যেখানে আছেন সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, অক্ষয় কুমার, সালমান খান, সানি দেওল, শশী কাপুরসহ অনেক সুপরিচিত তারকা।
প্রেম, বিয়ে ও ব্যক্তিগত ঝামেলা
সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল মহেশ আনন্দের ব্যক্তিগত অস্থিরতা। জানা যায়, তাঁর পাঁচটি বিয়ে এবং অন্তত এক ডজন প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
প্রথম স্ত্রী ছিলেন অভিনেত্রী রীনা রায়ের বোন বরখা রায়। এরপর বিয়ে করেন সাবেক মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এরিকা মারিয়া ডি’সুজা-কে, যাঁর সঙ্গে তাঁর একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি বিয়ে করেন মধু মালহোত্রা-কে। চতুর্থ বিয়ে ছিল অভিনেত্রী ঊষা বচ্চনির সঙ্গে, যা বিচ্ছেদে শেষ হয়। শেষ জীবনে তিনি বিয়ে করেন এক রুশ নারী, লানা-কে।
অর্থকষ্ট ও নিঃসঙ্গতার জীবন
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মহেশ আনন্দ ভোগ করেন দারিদ্র্য ও একাকিত্বে। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন:
“আমার বন্ধুরা বলে আমি মদ্যপ। আমার কোনো পরিবার নেই। সৎভাই আমাকে ৬ কোটি রুপি প্রতারণা করে নিয়েছে। আমি ৩০০-এর বেশি সিনেমায় কাজ করেছি, কিন্তু এখন পানির বোতল কেনারও টাকা নেই। পৃথিবীতে আমার কোনো বন্ধু নেই। খুব কষ্ট লাগে।”
শেষ চেষ্টা ও করুণ পরিণতি
ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মহেশ আনন্দ আবার অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে গোবিন্দ অভিনীত ‘রঙ্গিলা রাজা’ ছবিতে ছোট একটি ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু ছবিটি মুক্তির মাত্র ২২ দিন পরই তিনি পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান।
মুম্বাইয়ের তাঁর ফ্ল্যাটে ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সোফায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে—পাশেই ছিল এক বোতল অ্যালকোহল এবং একটি প্লেট খাবার। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তিনি মারা গিয়েছিলেন তিন দিন আগেই।
মহেশ আনন্দের জীবন ও কর্ম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বড় পর্দার জগৎ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে যে চরম বৈপরীত্য থাকে, তা কতটা করুণ হতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য