![]()
বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এই মুহূর্তে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অক্টোবর মাসে টানা তৃতীয় মাসের মতো দেশের পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪.১৩ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এবং ব্যাংক খাতের চলমান সংকটের কারণে আগামীতেও রপ্তানি কমতে পারে। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন।
পোশাক খাতের প্রভাব
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পণ্য যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। একক দেশ হিসেবে সর্বাধিক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ।
ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮.৩৯ শতাংশ। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী তিনটি প্রধান কারণে রপ্তানি কমার ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
-
নির্বাচনের আশঙ্কায় ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া
-
যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে চীনের ইউরোপমুখী রপ্তানি
-
সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সংকটে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে না পারা
তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কায় অনেক ক্রেতা অর্ডারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। তারা সম্পূর্ণ ঝুঁকি নিতে চাইছে না।”
ব্যাংক খাত ও রপ্তানির ঝুঁকি
সরকার সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো একীভূত করার ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক আমানতকারী এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে গার্মেন্টস মালিকরা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে পারছেন না। সরবরাহকারীরাও এসব ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নন।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ জানিয়েছেন, “আমাদের অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বড় কিছু ক্রেতাও অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। নিটিং ও ডাইং ইউনিটের কাজও কমে গেছে। আগামী নির্বাচনের আগে অর্ডারের প্রবাহ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।”
অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে হিমায়িত ও জীবিত মাছের রপ্তানি কমেছে ১৩%, প্লাস্টিক পণ্য ১২%, এবং কৃষিপণ্য ১০%। একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৩%, পাট ও পাটজাত পণ্য ৭%, এবং হোম টেক্সটাইল ১৪%।
জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে মোট রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ২.২২% বেড়েছে। এই সময়ে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৬.১৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। তবে জুলাইয়ের পরবর্তী তিন মাসে রপ্তানি টানা কমেছে।
রপ্তানিকারকরা সতর্ক করে বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং দেশীয় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সামনে কয়েক মাসেও রপ্তানি খাতের পরিস্থিতি তেমন উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পাঠকের মন্তব্য