রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন— যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো বিদেশী শক্তির চাপের মুখে রাশিয়া কখনো নতি স্বীকার করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে কোনো হামলা হলে তার প্রতিক্রিয়া হবে “অত্যন্ত কঠোর” এবং “অভূতপূর্ব।”
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এই বক্তব্য দেন। তার এই মন্তব্য আসে ঠিক একদিন পর, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি— রসনেফট (Rosneft) ও লুকওইল (Lukoil)—এর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন।
এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই বৈশ্বিক তেলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। ভারতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ সাময়িকভাবে কমানোর বিষয়টি তারা বিবেচনা করছে।
পুতিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার প্রতি একটি অবন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর কিছু প্রভাব পড়বে ঠিকই, তবে তা রাশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতিকে নাড়াতে পারবে না। আমাদের জ্বালানি খাত এখনো শক্তিশালী, স্থিতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক।”
তিনি আরও বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু কোনো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন জাতি কখনো বাইরের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না। রাশিয়াও নেবে না।”
পুতিন সতর্ক করে বলেন, “বিশ্ব জ্বালানি বাজারে ভারসাম্য নষ্ট হলে দাম আরও বাড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ করতে গেলে তার প্রতিক্রিয়া পুরো বিশ্বই টের পাবে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও জানান, তার দেশ অর্থনৈতিক প্রতিরোধে প্রস্তুত আছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় বিকল্প বাণিজ্য রুট ও জ্বালানি বাজার তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পুতিনের এই বক্তব্য কেবল যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, ইউরোপীয় দেশগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে— রাশিয়া এখনো জ্বালানি বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক শক্তি, এবং তাকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো প্রচেষ্টা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
এরই মধ্যে ক্রেমলিন জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে রাশিয়া–ভারত–চীন জ্বালানি সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।
এই ঘটনার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছুঁয়েছে, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পাঠকের মন্তব্য