সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন আজ (বুধবার, ১ অক্টোবর) মহামহিমান্বিত মহানবমী। এই দিন থেকেই দেবী দুর্গার বিদায়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, দশমীতে দেবী কৈলাশে স্বামীর গৃহে ফিরে যাবেন। তাই মহানবমী শুধু পূজার নয়, ভক্তদের হৃদয়ে আনন্দের পাশাপাশি এক অদ্ভুত বেদনার দিনও বয়ে আনে।
মহানবমীর আচার
মহানবমীতে সকালে তর্পণের মাধ্যমে দেবীর মহাস্নান সম্পন্ন হয় এবং ষোড়শ উপচারে পূজা করা হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় দেবীর মহাআরতি, যা এক বিশেষ আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। মহানবমীর বিশেষ রীতির মধ্যে আছে বলিদান, নবমী হোম এবং ১০৮টি নীলপদ্মে দেবীর পূজা। এরপর যথারীতি ভক্তরা অঞ্জলি নিবেদন করেন এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
সন্ধিপূজা: অষ্টমী ও নবমীর সেতুবন্ধন
মহানবমীর সূচনা হয় সন্ধিপূজার মাধ্যমে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিটজুড়ে চলে এই পূজা। মূলত দেবী চামুন্ডার আরাধনা হয় এই সময়। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করে ভক্তরা দেবীর চরণে নিজেদের ভক্তি নিবেদন করেন। এই বিশেষ মুহূর্তে ভক্তদের কণ্ঠে এক সুরেই ধ্বনিত হয়—“ওরে নবমী নিশি, না হইও রে অবসান।”
যজ্ঞ ও নিবেদন
মহানবমীর দিনে যজ্ঞ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরোহিতদের মতে, ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে দেবীর উদ্দেশ্যে বিশেষ যজ্ঞ সম্পন্ন করা হয়। নীলকণ্ঠ ফুল, নীল অপরাজিতা ফুল এবং নানা উপাচারের সঙ্গে মহানবমীর বিহিতপূজা ভক্তদের মাঝে গভীর আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি করে।
বিদায়ের সুর
যদিও দুর্গাপূজা আনন্দ-উৎসবের প্রতীক, মহানবমী থেকেই ভক্তদের হৃদয়ে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে। কারণ, এই রাতই জানিয়ে দেয় যে আগামীকাল দশমীর সঙ্গে শেষ হবে দুর্গোৎসব। দেবী বিদায়ের সুরে ভক্তদের কণ্ঠে তাই শোনা যায় আকুতি—“আরো কিছুক্ষণ থাকো মা, নবমী নিশি শেষ হয়ে যেও না।”
আগামীকাল বিজয়া দশমী
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর দিনে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানাবেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভক্তরা দেবীর চরণে অশ্রুজল নিবেদন করবেন এবং দেবীর কাছে প্রার্থনা করবেন আগামী বছর আবার ফিরে আসার জন্য—“আশ্বিনের পূর্ণিমা রাতে আবার আসিবে মা।”
মানবিক দৃষ্টিকোণ
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক ও মানবিক বন্ধনের উৎসব। দুর্গাপূজা ভক্তদের মনে ভরসা জাগায়, দুঃখ-কষ্ট দূর করার শক্তি দেয়। মহানবমীর দিন ভক্তরা দেবীর কাছে শুধু পূজার আচার নয়, জীবনের সুখ-শান্তি, সুস্বাস্থ্য, পারিবারিক কল্যাণ ও বিশ্বে শান্তির প্রার্থনা করে থাকেন।
এই উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও একাত্মতার বার্তা বহন করে। তাই মহানবমী শুধু পূজার রীতি নয়, এটি মানবতার এক মিলনক্ষেত্র।
পাঠকের মন্তব্য