অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে আওয়ামী লীগকে সরকার নিষিদ্ধ করেনি। দলটির রেজিস্ট্রেশনও বাতিল বা স্থগিত করা হয়নি। কেবল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, যা যেকোনো সময় পুনরায় সচল করা সম্ভব।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে জিটিও টেলিভিশনের সাংবাদিক মেহদি হাসানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ২৯ সেপ্টেম্বর।
কার্যক্রম স্থগিত, দল বৈধ
ড. ইউনূস বলেন, “কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। তবে আওয়ামী লীগ একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। কেবল তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় এই কার্যক্রম পুনরায় শুরু হতে পারে।”
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করছে। সুতরাং তারাই ভালোভাবে বলতে পারবে কোন দল অংশ নিতে পারবে আর কোন দল পারবে না।”
সমর্থক প্রসঙ্গ
আওয়ামী লীগের জনসমর্থন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “আমি মানি না যে তাদের লাখ লাখ সমর্থক আছে। তবে সমর্থক রয়েছে, এবং তারা সাধারণ ভোটারের মতোই ভোট দিতে পারবে। শুধু সেখানে আওয়ামী লীগের প্রতীক থাকবে না।”
সমালোচনা
প্রধান উপদেষ্টা আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক দল দাবি করলেও বাস্তবে তারা রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করেনি। তার ভাষায়, “তারা মানুষ হত্যা করেছে। যা করেছে তার কোনো দায় নেয়নি। বরং সবসময় অন্যকে দোষারোপ করেছে।”
মানবিক দৃষ্টিকোণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের বড় শক্তি। তাদের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় দলের সমর্থক ও সাধারণ মানুষ অনিশ্চয়তায় ভুগছে। লাখো কর্মী-সমর্থকের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। একইসাথে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও প্রশ্ন জেগেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে—দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনো বৈধ। তবে কার্যক্রম স্থগিত থাকায় দলীয় পরিচয়ে তারা কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। এর ফলে অনেক সমর্থক নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশে সংকোচ বোধ করছেন। এ অবস্থায় মানবিক প্রশ্ন হলো—একটি বড় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তাদের ভোটাররা কিভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করবেন এবং গণতন্ত্রের ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা পাবে।
পাঠকের মন্তব্য