রবিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন—“এখনও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। কতটা করা সম্ভব, সেটাই প্রশ্ন।”
রিজভীর দাবি, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ভেতরে ক্ষমতাসীনদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত কিছু গোষ্ঠী নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপির আশঙ্কা—এই সহযোগীরা শুধু পরিবেশ নষ্ট করবে না, বরং ভোটের দিন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি এভাবে আগেভাগেই শঙ্কা প্রকাশ করছে জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করার জন্য, যা একটি কৌশল। তবে এটিও সত্য যে অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের কারণে জনগণের একটি বড় অংশ ইসিকে নিরপেক্ষ মনে করে না।
বৈঠকে কমিশন বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। রিজভীর ভাষায়—“ইসির আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে মাঠপর্যায়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালট চালুর বিষয়েও আলোচনা চলছে।
২০২৫ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৬৪ লাখ। এর মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৪৫ লাখ তরুণ। রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলগত ফোকাস এখন এই প্রজন্মের দিকে। বিএনপি পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে, আর ক্ষমতাসীনরা উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার প্রচারণায় জোর দিচ্ছে।
তরুণদের ভোট যে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এতে সংশয় নেই।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে “গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত” বলে আখ্যায়িত করেছেন রিজভী।
তিনি বলেন—“এটি একটি নিন্দনীয় ঘটনা। যেকোনো রাজনৈতিক কর্মীর ওপর এ ধরনের হামলা নির্বাচনী পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে।”
বাংলাদেশের নির্বাচন বরাবরই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজরে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। গত দুই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় অংশগ্রহণ না থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তাই এবারের নির্বাচনে ইসির নিরপেক্ষ ভূমিকা শুধু দেশের ভেতর নয়, বিশ্বমঞ্চেও গ্রহণযোগ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি বলছে—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ছাড়া জনগণের আস্থা ফিরবে না। ইসি বলছে—তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জনগণ অপেক্ষা করছে মাঠপর্যায়ে সেই আস্থার প্রমাণ দেখার জন্য।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন শুধু ভোটের লড়াই নয়, এটি ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র বৈধ পথ। আর সেই পথ যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে যায়।
পাঠকের মন্তব্য