আভা ম্যানসন | ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
২৫ আগস্ট ২০২৫
নরম আলোয় সাজানো ঘরে বসে আছেন হোডা কটব। পরনে সিল্কি টু-পিস, কানে ছোট্ট হুপ কানের দুল। এক হাতে মুখ ঠেকিয়ে হাসিমুখে বললেন, “আজকাল ভোর ৪টা ৩০ পর্যন্ত ঘুমাই। জানেন তো, এটা আমার জন্য একধরনের ছুটি!”
২৬ বছরের টানা ব্যস্ততা শেষে এখন তিনি যেন এক নতুন জীবনের শুরুতে দাঁড়িয়ে।
শুরুর দিনগুলোর স্মৃতি
প্রশ্ন করতেই প্রথম অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন হোডা—
“মিসিসিপির গ্রিনভিলে প্রথমবার সন্ধ্যার খবর পড়তে বসেছিলাম। আত্মবিশ্বাস দেখাতে গিয়ে নিজের নামের বদলে অন্য কারও নাম বলে ফেললাম। ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। তখন জানতামই না কীভাবে কিছু করতে হয়। কিন্তু একটা জিনিস জানতাম—চেষ্টা করতে হবে।”
হাসতে হাসতে যোগ করলেন, “এমন হোঁচট খেয়েই তো শুরু হয় আসল যাত্রা।”
এনবিসি থেকে বিদায়
১৯৯৯ সালে এনবিসিতে যোগ দেন হোডা কটব। এরপর প্রায় আড়াই দশক ধরে “টুডে” শোতে সঞ্চালনা করেছেন তিনি। প্রতিদিন ভোর ৩টার ঘুম ভেঙে স্টুডিওতে ছুটে যাওয়া ছিল জীবনের নিয়ম।
“সকালে এত তাড়াতাড়ি উঠতে হতো যে কখনও কখনও মনে হতো আমি এক রোবট,”—বললেন তিনি।
কিন্তু দর্শকরা তাঁকে শুধু একজন উপস্থাপক হিসেবেই নয়, বরং প্রতিদিনের আনন্দ ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পেয়েছেন।
এ বছর জানুয়ারিতে সেই দীর্ঘ যাত্রার ইতি টানলেন হোডা। “ক্যারিয়ার শেষ হয়নি, বরং নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে”—বলেন তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
নতুন স্বপ্ন: “জয় ১০১”
এই মে মাসে তিনি চালু করেছেন “জয় ১০১”, একটি ওয়েলনেস কোম্পানি ও মোবাইল অ্যাপ। এর উদ্দেশ্য—মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া, প্রতিদিনের জীবনেও সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।
“আমরা অনেকেই ভাবি সুখ মানেই বড় অর্জন। কিন্তু না, ছোট ছোট মুহূর্তেই আসল আনন্দ লুকিয়ে আছে। সেই আনন্দ খুঁজে পেতেই এই উদ্যোগ,”—বললেন হোডা।
হাসি-আনন্দের দর্শন
কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?—প্রশ্ন করা হলে হোডা উত্তর দিলেন এক মুহূর্ত দেরি না করে:
“কাজ যদি কেবল চাপ আর সিরিয়াসনেসে ভরা হয়, তবে সেটি টেকে না। হাসি-আনন্দ ছাড়া কর্মক্ষেত্র একঘেয়ে হয়ে যায়।”
তাঁর সহকর্মীরাও সাক্ষ্য দেন, হোডার সংক্রামক হাসিই ছিল অফিসের প্রাণ।
নতুন বই, নতুন ভোর
আগামী শরতে প্রকাশিত হবে তাঁর নতুন বই। বইটিতে থাকবে জীবনের বাঁকবদল, কঠিন সময় সামলানোর কৌশল আর প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দের গল্প।
“আমি চাই পাঠকরা আমার ভুলগুলো দেখুক, শিখুক এবং বুঝুক—কেউই পরিপূর্ণ নয়। কিন্তু হাসি ধরে রাখলে পথটা সহজ হয়ে যায়।”
এখন ভোর ৪টা ৩০ পর্যন্ত ঘুম—এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বিলাসিতা। “কখনও ভাবিনি একটু বেশি ঘুম আমার কাছে এত আনন্দের হবে,”—মুচকি হেসে বললেন হোডা।
শেষকথা
হোডা কটবের গল্প শুধু একজন টিভি তারকার সাফল্য নয়, বরং এক নারীর দৃঢ়তা, ভুল থেকে শেখা আর ইতিবাচকতায় ভরা জীবনের প্রতিচ্ছবি।
তিনি প্রমাণ করেছেন—সাফল্যের মূলমন্ত্র কেবল কঠোর পরিশ্রম নয়, বরং হাসি ধরে রাখা এবং আনন্দকে ভাগ করে নেওয়া।
পাঠকের মন্তব্য