দেশে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকারে বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। এজন্য পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় বহুমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
শহরাঞ্চলে তীব্র সমস্যা
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিন ব্যবহারের হার অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকার ড্রেনগুলোতে এসব অপচনশীল বর্জ্য জমে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে, যার ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে নিয়মিত ঘটনা। বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যা স্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ
তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন এক কোটি ৩০ লাখের বেশি পলিব্যাগ নদী, খাল, লেক ও ডোবায় জমা হচ্ছে। এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং শহরের সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে।
অবৈধ উৎপাদন অব্যাহত
সরকার প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করলেও অনেক এলাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এখনো নিয়মের বাইরে গিয়ে এসব পণ্য তৈরি হচ্ছে। যত্রতত্র ব্যবহৃত তিন লাখ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিবছর উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক যেমন পলিথিন, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট ও প্যাকেজিং বর্জ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। তিনি জানান, এসব বস্তু মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করছে, পাশাপাশি কৃষিজমির উর্বরতাও নষ্ট করছে। তার মতে, বিকল্প হিসেবে কাপড়, কাগজ, পাট ও পাতা দিয়ে তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করা গেলে প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।
সরকারের বার্তা
সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট পরিদর্শনকালে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিনের কোনো উপকারিতা নেই। এগুলো মাটির উর্বরতা ধ্বংস করছে এবং পানি প্রবাহে বাধা দিচ্ছে। তিনি সবাইকে প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে যেমন কৃষক লাভবান হবে, তেমনি পরিবেশ ও জলবায়ুও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত থাকবে।
পাঠকের মন্তব্য