বাংলাদেশের আলোচিত জুলাই সনদ নিয়ে মতামত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ও গবেষক ডেভিড বার্গম্যান। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করা এই সাংবাদিক রবিবার সকালে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি বিশদ পোস্ট দেন। সেখানে তিনি সনদটির ইতিবাচক দিক ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই তুলে ধরেন।
প্রগতিশীল সংস্কারের দিকগুলো
বার্গম্যান বলেন, সনদটির প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছে প্রস্তাবিত অনেকগুলো সংস্কারই প্রগতিশীল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কমানোর দিকে লক্ষ্য রেখেছে। তাঁর মতে, সংবিধান সংস্কারে আগ্রহী বেশির ভাগ মানুষই এগুলোকে সমর্থন করবেন।
‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দকে ঘিরে অস্পষ্টতা
তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বর্তমানে থাকা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটিকে ঘিরে সনদে একধরনের কৌশলী অস্পষ্টতা রাখা হয়েছে। নতুন করে ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’ শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। বার্গম্যান মনে করেন, এটি কোনো বাতিলের ইঙ্গিত নয় বরং ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের হাতে এই বিতর্ক সমাধানের সুযোগ রাখছে।
সংসদের দ্বিতীয় কক্ষ ও ক্ষমতার ভারসাম্য
সনদে প্রস্তাবিত সংসদের দ্বিতীয় কক্ষ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, এর লক্ষ্য মূলত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। তবে বাস্তবে এটি কার্যকর হবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত।
জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিয়ে প্রশ্ন
বার্গম্যান সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন তুলেছেন সনদটির বৈধতা নিয়ে। তিনি বলেন, এই সনদকে বর্তমান সংবিধানের ঊর্ধ্বে গণ্য করা সঠিক নয়। রাজনৈতিক ঐকমত্য যেসব দলগুলোর মধ্যে হয়েছে, তাদের অনেকেই গণতান্ত্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি বা কখনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই একে “জনগণের ইচ্ছার সর্বোচ্চ প্রকাশ” বলা হাস্যকর।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক
সনদে বলা হয়েছে জুলাই/আগস্টে “১ হাজার ৪০০ জনের বেশি” নিহত হয়েছেন। কিন্তু বার্গম্যান সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা তুলে ধরে বলেন, নিশ্চিত সংখ্যা প্রায় ৮৫০ জন, যা সামান্য বাড়তে পারে তবে ১ হাজার ৪০০ নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংখ্যাটি জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো “প্রায় এক হাজার” বলা হলে বাস্তবতার কাছাকাছি হতো।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ
সবচেয়ে আলোচিত সমালোচনা এসেছে ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে। বার্গম্যান প্রশ্ন তোলেন, এটি কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অংশ হিসেবে গণ্য হতে পারে? তাঁর মতে, এ ঘটনায় সরকারের অব্যবস্থাপনার দায় থাকতে পারে, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যার প্রমাণ নেই। ফলে এটিকে রাজনৈতিক নিপীড়নের তালিকায় যুক্ত করা বিভ্রান্তিকর।
ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকের সমন্বয়
ডেভিড বার্গম্যান স্বীকার করেছেন, জুলাই সনদে কিছু ইতিবাচক সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন—এই সনদকে জনগণের সর্বজনীন ইচ্ছার প্রতিফলন বলে প্রচার করা বিভ্রান্তিকর হবে।
পাঠকের মন্তব্য