৮০ বছর আগের আজকের এই দিনে—১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট—জাপানের হিরোশিমা শহর হয়ে উঠেছিল ইতিহাসের এক ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়ের প্রতীক। বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক হামলার সেই দিনটিকে স্মরণ করে আজ বুধবার (৬ আগস্ট) হিরোশিমায় আয়োজন করা হয়েছে মৌন প্রার্থনা ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো অনুষ্ঠান।
সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়), মার্কিন বিমান ‘এনোলা গে’ থেকে ‘লিটল বয়’ নামক পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল, যা মুহূর্তেই শহরটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এ সময়কে কেন্দ্র করেই শুরু হয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
৮০ বছর পর, এখনো অমলিন সেই ক্ষত
কালো পোশাক পরা শত শত কর্মকর্তা, স্কুলশিক্ষার্থী এবং হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষরা শহরের কেন্দ্রস্থলে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। সেখানেই মৌন প্রার্থনা করে স্মরণ করা হয় নিহত প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের আত্মত্যাগ।
৯৬ বছর বয়সী ইয়োশি ইয়োকোয়ামা, যিনি তাঁর বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে হারিয়েছেন সেদিন, তিনি নাতির সঙ্গে হুইলচেয়ারে করে এসে বলেন,
“বেদনাটা আজও টাটকা। সময় কেটে গেলেও স্মৃতি মুছে যায় না।”
হিরোশিমার মেয়রের সতর্কবার্তা
হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই তাঁর বক্তৃতায় বলেন,
“বিশ্ব এখন আবার সেই বিপজ্জনক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আস্ফালন চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতগুলো প্রমাণ করে, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে দরকার ছিল, তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।”
জাপানের অবস্থান: পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানান,
“জাপান এমন একমাত্র দেশ যেটি পারমাণবিক হামলার শিকার হয়েছে। তাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে নেতৃত্ব দেওয়া।”
ইতিহাসের বিভীষিকা: ৬ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট
-
৬ আগস্ট ১৯৪৫: হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ ফেলা হয়
-
৯ আগস্ট: নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমা হামলায় ৭৪ হাজার মানুষ নিহত
-
১৫ আগস্ট: জাপান আত্মসমর্পণ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে
পেছনে থাকা নয়, শিক্ষা নেওয়ার সময়
অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তাইওয়ান ও ফিলিস্তিন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, তবে রাশিয়া ও চীন অংশ নেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
পোপ চতুর্দশ লিও বলেন,
“আজকের বৈশ্বিক উত্তেজনার সময়ে হিরোশিমা ও নাগাসাকি সেই চরম পরিণতির প্রতীক যা মানবজাতি ভুলে গেলে চলবে না।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন,
“এই ধ্বংসাত্মক অস্ত্রগুলো এখন আবার শক্তির ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মানবজাতির জন্য ভয়াবহ ইঙ্গিত।”
পাঠকের মন্তব্য