![]()
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মেধাবী শিক্ষার্থী এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ–এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ নতুন অগ্রগতি দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তিকে হারানোর ঘটনা নয়, এটি ছিল দেশের এক উত্তাল সময়ের—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের—ত্যাগ, সংগ্রাম এবং গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
তার মৃত্যু আন্দোলনরত তরুণদের মনে শোকের পাশাপাশি প্রতিরোধের নতুন শপথ জাগিয়ে তুলেছিল। সেই ঘটনার বিচার আজও অসংখ্য মানুষের আবেগ, অপেক্ষা এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য
সকালে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,
“আবু সাঈদের মতো তরুণের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। আমরা প্রত্যেকে যারা জুলাইয়ের সেই আন্দোলনে ছিলাম—এই সাক্ষ্য আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধতা।”
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে, মামলার অগ্রগতি দ্রুত এগিয়ে নিতে এই সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হাসনাত আবদুল্লাহ শুধু আন্দোলনের সাক্ষী নন, তিনি ছিলেন মাঠপর্যায়ের প্রধান সমন্বয়কারীদের একজন, যিনি ঘটনার প্রত্যক্ষ ও পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারবেন।
জুলাই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা
আবু সাঈদ ছিলেন বেরোবির এক উজ্জ্বল শিক্ষার্থী—যার স্বপ্ন ছিল পরিবারকে উঠে দাঁড়ানো, সমাজে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই ভয়াবহ সময়ের সহিংসতায় তার প্রাণ ঝরে যায়।
পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক এবং দেশজুড়ে ন্যায়বিচার প্রত্যাশী মানুষের কাছে সাঈদ আজও এক অবিচ্ছেদ্য স্মৃতি ও প্রেরণার নাম।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা—ন্যায়বিচারের পথে আরেক ধাপ
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়া মামলার শুনানি নতুন করে আলোচনায় এনেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিচার কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের দায় নিরূপণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইনজীবী মহলের দাবি, সঠিক তথ্য, প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন করা গেলে বিচার আরও ত্বরান্বিত হবে। এ বিচার দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় নতুন মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।
আবু সাঈদের সহপাঠীরা সামাজিক মাধ্যমে লিখছেন—
“সাঈদ শুধু আমাদের বন্ধু নয়, সে ছিল একটি প্রজন্মের সাহস। তার আত্মত্যাগের ন্যায়বিচার পেলে আমরা মনে করব—জুলাইয়ের রক্তে রাঙা পথটি বৃথা যায়নি।”
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ঘিরে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষাঙ্গনের আগ্রহ ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে।
পাঠকের মন্তব্য