![]()
জাপানের উত্তর–পূর্বাঞ্চল আবারও কেঁপে উঠেছে শক্তিশালী ভূমিকম্পে। স্থানীয় সময় সোমবার গভীর রাতে হোক্কাইডো ও আশপাশের এলাকায় অনুভূত হয় ৭ দশমিক ৬ মাত্রার প্রচণ্ড ভূকম্পন। মুহূর্তেই অন্ধকারে নেমে আসে আতঙ্ক, মানুষের চোখে ফিরে আসে ২০১১ সালের ভয়াবহ স্মৃতি।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল অওমোরি প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায়, ভূমির প্রায় ৫০ কিলোমিটার গভীরে। কম্পন এতটাই তীব্র ছিল যে বহু ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে, মানুষ দৌড়ে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। ভূমিকম্পের কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে জারি করা হয় জরুরি সুনামি সতর্কতা।
তিন মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের আশঙ্কা
কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে—কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে তিন মিটার বা প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার সুনামি ঢেউ আঘাত হানতে পারে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
অনেক স্থানে দেখা গেছে প্রাথমিক সুনামি ঢেউয়ের আছড়ে পড়া। সাইরেন বাজানো হয়েছে উপকূলের সেতু, বাজার ও আবাসিক এলাকায়; মানুষ উদ্বিগ্ন, শিশু ও বয়স্কদের আগে সরিয়ে নিতে কাজ করছে উদ্ধারকর্মীরা।
এখন পর্যন্ত বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই
ভূমিকম্পের পরপরই কর্তৃপক্ষ জানান—এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জরুরি সেবা, দমকল বিভাগ, কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ক্ষতি হয়েছে কি না, তা যাচাই করছে প্রযুক্তিগত টিম।
২০১১ সালের তাণ্ডব—আবার ফিরে এলো পুরোনো ভয়
এই ভূমিকম্প মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ২০১১ সালের সেই দুঃসহ দিনে, যখন একই অঞ্চলে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্প ও ভয়াবহ সুনামি প্রায় ১৮ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ৪০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা সম্পন্ন ঢেউ গ্রাস করেছিল ঘরবাড়ি, সড়ক, কৃষিখামার, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অগণিত অবকাঠামো।
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও ঘটে যায় ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা।
সেই ভয়াবহতার স্মৃতি আজও গভীর দাগ হয়ে আছে জাপানের মানুষের মনে। তাই শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হতেই মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে, মনে ফিরে আসে পুরনো ক্ষত।
মানুষের নিরাপত্তাই এখন প্রধান লক্ষ্য
জাপানি সরকার জানিয়েছে—জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করছে প্রশাসন। উপকূলজুড়ে উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, পর্যটন এলাকা এবং সাগর–মুখী শহরগুলোতে চলছে মাইকিং।
বাড়িতে অবস্থানরত মানুষদের ধৈর্য রাখতে এবং নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
আপাতত বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও, সামনে আরও আফটারশক—অর্থাৎ পরাঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য