![]()
দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে জমানো দীর্ঘমেয়াদি খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে প্রথমবারের মতো ‘আংশিক ঋণ অবলোপন’ (Partial Write-Off) করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যা, বছরের পর বছর অনাদায়ী থাকা বিপুল ঋণ স্থিতিপত্রে (ব্যালান্স শিট) প্রকৃত আর্থিক অবস্থা আড়াল করছিল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাও দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন এ কৌশল চালু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, যে সব মন্দ (Substandard) বা ক্ষতিগ্রস্ত (Bad/Loss) ঋণ পুরোপুরি আদায়যোগ্য নয় বলে বিবেচিত, সেসব ঋণের জামানতবিহীন এবং আদায়-অযোগ্য অংশ আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে। এতে ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের অনাদায়ী ঋণের হিসাব থেকে অযোগ্য অংশ বাদ দিয়ে প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে পারবে। সার্কুলারটি অনুমোদিত হয়েছে বুধবার (৩ ডিসেম্বর)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিপত্রে বহাল থাকা খেলাপি ঋণের বড় অংশ ব্যাংকের প্রকৃত ঝুঁকি আড়াল করে রাখছিল। অনেক ক্ষেত্রেই যেসব ঋণের বকেয়া আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেগুলোও হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাচ্ছিল না। নতুন নীতিমালা চালু হওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন অযোগ্য অংশ সরিয়ে রেখে আদায়যোগ্য অংশে মনোযোগ দিতে পারবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে সুদের অংশ বাদ দিতে হবে। অনারোপিত সুদ (যা এখনো গ্রাহকের হিসাবে যোগ হয়নি) আলাদা করে হিসাব করতে হবে, যাতে প্রকৃত ঋণের ছবি স্পষ্ট হয়। প্রয়োজনে জামানতের বাজারমূল্য নতুন করে নির্ধারণ করে অবলোপনের সিদ্ধান্তকে আরও বাস্তবসম্মত করা যাবে।
আদায়ের নিয়মেও নতুন নির্দেশনা এসেছে: গ্রাহক জামানত ছাড়া যে অর্থ পরিশোধ করবেন, তা প্রথমে অবলোপনকৃত অংশে সমন্বয় হবে। অবলোপনকৃত অংশ পরিশোধ হয়ে গেলে এরপর মূল ঋণ পরিশোধে সেই অর্থ কাজে লাগবে। এতে কোন অংশ আদায় হচ্ছে আর কোন অংশ পুরোপুরি বাদ যাচ্ছে—তা ব্যাংকের জন্য স্পষ্ট হবে।
গ্রাহকের প্রকৃত দায় নির্ধারণে ব্যাংকগুলোকে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে—স্থিতিপত্রে থাকা বকেয়া ঋণ, অনারোপিত সুদ এবং অবলোপনকৃত কিন্তু এখনো অনাদায়ী পাওনা। এতে ঋণের সঠিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে।
আংশিক অবলোপনের পরও ঋণ হিসাব পুনঃতফসিল (Rescheduling) বা এক্সিট সুবিধা দেওয়ার সুযোগ আগের মতোই থাকবে—যার ফলে গ্রাহকরা সহজ শর্তে ঋণ পরিশোধে ফিরতে পারবেন এবং ব্যাংকের আদায় বাড়বে।
আগের নির্দেশনায় আংশিক অবলোপন নিষিদ্ধ ছিল। নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে পুরোনো নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে অনাদায়ী ঋণের অকারণে স্ফীত হিসাব কমবে, ব্যাংকের স্থিতিপত্র আরও স্বচ্ছ হবে এবং খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী হবে। নির্দেশনাটি ইতোমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য