![]()
কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি—এই দুই বাধা মিলেই তার লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভালো নয়, যা এ মুহূর্তে যাত্রার সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি—নতুন করে দুশ্চিন্তা
মির্জা ফখরুল বলেন—
“গতকাল থেকে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ভালো না। এয়ারক্র্যাফটের সমস্যা আছে, আবার শারীরিক অবস্থাও যথেষ্ট নাজুক। এই পরিস্থিতিতে যাত্রার তারিখ বদল করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন—যদি মেডিকেল বোর্ড মনে করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আকাশপথে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত, তবে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে। তবে সব সিদ্ধান্তই চিকিৎসকদের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এখনো ঢাকায় পৌঁছায়নি
বিএনপির মিডিয়া সেল জানিয়েছে, কাতারের আমির প্রদত্ত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কারিগরি ত্রুটির কারণে শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি শনিবার ঢাকায় আসতে পারে।
এই বিলম্বে লন্ডনে যাত্রার সময়সূচি স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে গেছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা বোর্ডও খালেদা জিয়ার অবস্থার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে।
এভারকেয়ারে পৌঁছেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান
এদিকে লন্ডন থেকে ঢাকায় নেমে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়—তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের বরাতে জানা গেছে—জুবাইদা রহমান লন্ডন ফেরার সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ফিরে যাবেন।
কারা থাকবেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে?
খালেদা জিয়ার সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার সফরে থাকবেন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের মধ্যে আছেন—
চিকিৎসক দল:
-
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন
-
ডা. এনামুল হক চৌধুরী
-
ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী
-
ডা. সাহাবুদ্দিন তালুকদার
-
ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ
-
ডা. মো. জাফর ইকবাল
-
ডা. মোহাম্মদ আল মামুন
পরিবার ও সহকারী সদস্যরা:
-
সৈয়দা শামিলা রহমান (পুত্রবধূ)
-
মো. আব্দুল হাই মল্লিক (তারেক রহমানের সহকারী)
-
মো. মাসুদুর রহমান (খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব)
-
গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম
-
গৃহকর্মী রুপা শিকদার
-
এসএসএফের দুই সদস্য
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যেন লন্ডনে পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাই পুরো দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জটিল শারীরিক অবস্থা—দীর্ঘদিনের রোগযন্ত্রণায় আক্রান্ত
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন—
-
হৃদ্রোগ
-
ডায়াবেটিস
-
আর্থ্রাইটিস
-
কিডনি জটিলতা
-
লিভার সিরোসিস
-
ফুসফুসের সংক্রমণ
গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং অবস্থার অবনতি হলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (CCU) স্থানান্তর করা হয়।
অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও চীন থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসে চিকিৎসা টিমে যুক্ত হয়েছেন।
মানবিক উদ্বেগে দেশজুড়ে প্রার্থনা
অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে—
দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ উপাসনালয়ে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
মানবিক–রাজনৈতিক উভয় পর্যায়ে তার সুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য