![]()
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিনের অস্থিরতার মাঝে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল দেশের সবচেয়ে বড় এবং সরকারি ইসলামী ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন ও পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার থেকে ব্যাংকটির দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়, বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
নতুন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে।
আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক—দু’পক্ষই মনে করছে, এই উদ্যোগ দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতে নতুন স্থিতি ও আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অমানতকারীদের টানাটানি শেষে ‘ফেরতের সুনির্দিষ্ট পথ’
দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত উত্তোলন সংকটে বিপাকে পড়েছিলেন সাধারণ গ্রাহক, আমানতকারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রবাসী আয় নির্ভর পরিবারগুলো। অনেকে চিকিৎসা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
এই বাস্তবতায় নতুন ব্যাংকটির কার্যক্রম আমানতকারীদের সামনে নতুন আশার আলো হয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে—
আগামী সপ্তাহ থেকেই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত ফেরত দেওয়া শুরু হবে।
এরপর বড় অঙ্কের আমানত ফেরতের জন্য ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।
এতে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছেন গ্রাহকেরা। অনেকেই মনে করছেন, এই ব্যাংক কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় চালু হলে শত শত পরিবার আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সক্ষম হবে।
মূলধন ৩৫ হাজার কোটি—সরকারি অংশই ২০ হাজার কোটি
‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’-এর পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে—
-
সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা,
-
অমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারি এ অংশগ্রহণ গ্রাহকদের আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বড় অঙ্কের মূলধনী শক্তি নতুন ব্যাংকটিকে টেকসই কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করবে।
ইসলামী ব্যাংকিং খাতে স্থিতি ফেরানোর বড় পদক্ষেপ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অনুৎপাদনশীল ঋণ এবং ব্যবস্থাপনাগত জটিলতায় ইসলামী ব্যাংক খাতে অস্থিরতা প্রবল হয়ে উঠেছিল।
এ অবস্থায় সরকারি নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নৈতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মানবিক আর্থিক সুরক্ষা—অসহায় মানুষের ভরসা
যেসব গ্রাহক আমানত আটকে যাওয়ায় জীবন-জীবিকা হারানোর পথে ছিলেন—নতুন এই ব্যাংকের কার্যক্রম তাদের জন্য মানবিক সুরক্ষার মতো।
অনেকে চিকিৎসা, ওষুধ, ভাড়া, সংসার খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা—সবকিছুই নির্ভর করছিল আমানতের ওপর। তাই ব্যাংকটির চালু হওয়া তাদের কাছে কেবল আর্থিক খবর নয়—বরং জীবনে ফিরবার একটা নতুন সুযোগ।
পাঠকের মন্তব্য