![]()
টানা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আবারও অনুভূত হলো মৃদু ভূকম্পন, যা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙা মানুষের অনেকেই ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে এটি ছিল দেশের ভেতরে অনুভূত হওয়া একাধিক ভূমিকম্পের সর্বশেষটি।
উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর শিবপুর—গভীরতা ৩০ কিলোমিটার
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি এবং ইউরোপিয়ান–মেডিটারেনিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে উত্তর–উত্তরপূর্বে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এবং নরসিংদী থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে—এটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর শিবপুর, গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার।
ভোরবেলার এই ঝাঁকুনিতে ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মানুষ ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠেন। অনেকেই জানান—হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনিতে বিছানা নড়িয়ে ওঠে, দরজা জানালা কেঁপে ওঠে।
টানা ভূমিকম্পে বাড়ছে উদ্বেগ
এর মাত্র দুই দিন আগে, ২ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে, বঙ্গোপসাগরে ৪.২ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তারও আগের দিন, ১ ডিসেম্বর, মধ্যরাতে ঢাকাসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। মার্কিন ইউএসজিএস জানিয়েছিল—সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯, গভীরতা ১০৬ কিলোমিটার।
ঘনঘন ভূমিকম্পের এই ধারাবাহিকতায় মানুষের উদ্বেগও বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
২১ নভেম্বরের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষত এখনো কাটেনি
গত ২১ নভেম্বর হওয়া ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নরসিংদী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষের কাছে।
সে ঘটনায় অন্তত ১০ জন মারা যান, আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। দেশের বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কিছু ভবন হেলে পড়ে; আজও অনেক বাসিন্দা নিরাপদে ঘুমাতে পারছেন না।
২২ নভেম্বর দিনটি আরও উদ্বেগ বাড়ায়—সকাল ও সন্ধ্যায় দুইবার ভূকম্পন অনুভূত হয় রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায়।
মানুষের ভয়—“কখন যে আবার কাঁপবে!”
ঘনঘন ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে। কেউ রাতে গভীর ঘুমাতে পারছেন না, কেউ নিজের বাসা নিয়ে শঙ্কায় আছেন, আবার কেউ নতুন করে আশ্রয়ের জায়গা ভাবছেন।
ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন—
“মনে হচ্ছে মাটি আমাদের পায়ের নিচে স্থির নেই। কখন কাঁপবে, কেউ জানে না।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত; তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
তবে বর্তমানে যে ঘনঘন হালকা ভূমিকম্প হচ্ছে, তা বড় কোনো কম্পনের ইঙ্গিত কিনা—এ নিয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য নেই।
পাঠকের মন্তব্য