![]()
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা আগে ভোটকেন্দ্রে যাননি তাদের কেন্দ্রে আনাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনে ইইউর প্রত্যাশা:
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সময়মতো, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। তিনি জানান, এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার পথে নিজস্ব আখ্যান পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক বিশাল সুযোগ। নির্বাচন কমিশন শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, একই দিনে জুলাই চার্টার সংক্রান্ত গণভোটও আয়োজনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের উন্নত প্রস্তুতি এবং একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের বিবেচনা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ইইউ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার, পেশাদারিত্ব এবং সুসংগঠিত নির্বাচন পরিচালনার সক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেয়।”
বিশাল পর্যবেক্ষক মিশন মোতায়েন:
মাইকেল মিলার জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ১৫০ সদস্যের একটি বিশাল নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ধাপে ধাপে এই দল বাংলাদেশে আসবে এবং ২০২৬ সালের বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। তাদের দায়িত্ব হবে সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশ মনিটর করা এবং ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষণ করা।
তিনি বলেন, “এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আমাদের আস্থা এবং এই দারুণ বৈচিত্র্যময় দেশে নির্বাচনের প্রতি আমাদের সমর্থনের একটি নিদর্শন।”
প্রথমবার ভোটদানকারীরাই বড় চ্যালেঞ্জ:
নতুন ভোটারদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মিলার বলেন, বাংলাদেশে এমন এক প্রজন্ম রয়েছে যারা আগের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। হয় তারা নিজেরাই সেই নির্বাচনগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তারা জানত সেগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, অথবা তারা ভয় পেয়েছিল যে ভোট দেওয়ার কাজটি সহিংসতার সঙ্গে হবে।
তিনি যোগ করেন, “সুতরাং আপনাদের কাছে এমন এক প্রজন্ম এবং হয়তো আরও বেশি সংখ্যক ব্যক্তি রয়েছে যারা কখনও ভোট দেননি। এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ মানুষকে জানতে হবে নির্বাচনের দিন তারা লজিস্টিকভাবে কী করছেন।”
তিনি বলেন, এখন নাগরিক ভোটার শিক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সাধারণ ভোটারদের বোঝাতে হবে যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং গণভোটের অর্থ ও তাৎপর্য কী। প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়া তরুণদের নিরাপদ ও স্বচ্ছ পরিবেশ নিশ্চিত করে ভোটকেন্দ্রে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ভোটদানের সময় বৃদ্ধি বুদ্ধিমানের কাজ:
রাষ্ট্রদূত মিলার জানান, নির্বাচন কমিশন ভোটদানের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তিনি খুবই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণে বিলম্ব হবে। ইসির প্রস্তুতিতে আমরা সন্তুষ্ট। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা খুব আশাবাদী।”
তিনি আরও বলেন, লজিস্টিক ও সম্ভাব্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোকে খুব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইসির প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ রোধের সুযোগ:
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশের সকল অংশীদারদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর খুব মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এটি এমন একটি সময় যখন দেশটি গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের প্রবণতা উল্টে দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে তার সুনাম পুনরায় স্থাপন করতে পারে।”
শেরেবাংলানগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শনিবার মক ভোটিং দেখে আসার পর মঙ্গলবার সিইসির সঙ্গে এ বৈঠক হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হওয়ার কথা রয়েছে এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
পাঠকের মন্তব্য