![]()
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে তারা বিষয়টি ‘পর্যালোচনা করছে’। একই সঙ্গে পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালকে দিয়েই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। তাঁর ভাষ্য—বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়া এখন সময়ের দাবি, আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনও তা নিয়ে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে।
‘ন্যায়বিচার এড়ানো যাবে না’—শফিকুল আলমের দৃঢ় অবস্থান
স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম লিখেছেন—
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—দণ্ডিত হওয়ার পর হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ তারা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।
প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার শুরু হতে পারে কামালকে দিয়ে
স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করা হয়—
“হাসিনার শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থক থাকলেও ‘ঢাকার কসাই’ আসাদুজ্জামান খান কামালকে খুব শিগগিরই প্রত্যর্পণ করা হবে বলে আমি আশাবাদী।”
কামাল বাংলাদেশের একাধিক হত্যাকাণ্ড, গুম ও দমন–পীড়ন অভিযানের নির্দেশদাতা হিসেবে বহুবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন।
জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডে তাঁর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়—আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাড়ছে আলোচনার ঝড়
শফিকুল আলম লিখেছেন—
“হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত কথিত অপরাধগুলো নিয়ে যত আলো পড়বে, ততই জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় কামালের ভূমিকা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আরও মনোযোগ পাবে।”
গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।
শিশু হারানো মা, ছেলে হারানো বৃদ্ধ বাবা, স্বামী হারানো স্ত্রী—তাদের আর্তচিৎকার থামেনি।
প্রত্যর্পণ ও বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে তাদের বহুদিনের প্রতীক্ষা হয়তো বাস্তবে রূপ পাবে।
অর্থ–ক্ষমতা দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না—এমন মন্তব্যেও দৃঢ় তিনি
তিনি আরও বলেন—
“কামাল বা অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা যত অর্থই ব্যয় করুন না কেন, চিরদিন দায় এড়াতে পারবেন না। যদি আমরা জাতি হিসেবে দৃঢ় থাকি, তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অপরাধীরই পরিণতি এড়ানো সম্ভব হবে না।”
তার বক্তব্যে স্পষ্ট—এই বিচার শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়।
যারা নিহত হয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন, যেসব পরিবার জীবনের দুঃসহ বেদনায় দিন কাটাচ্ছে—তাদের প্রতি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব এখনও অসম্পূর্ণ।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে নতুন করে আশার আলো
প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগোতে শুরু করলে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা যেন নতুন করে আলোর রেখা দেখাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছে।
একজন নিহত তরুণের মা বলেন—
“যেদিন আমার ছেলের হত্যাকারীরা দেশের মাটিতে এসে আদালতে দাঁড়াবে, সেদিনই আমি মনে করব—আমার সন্তান শান্তিতে আছে।”
ন্যায়বিচার কার্যকর হলে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হয়তো দীর্ঘদিনের দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে শুরু করবে।
পাঠকের মন্তব্য