![]()
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে দেশে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় দেন এবং নির্দেশ দেন, তাদের সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়া হবে।
এটি জুলাই–আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়, যেখানে পূর্বে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল। রাজসাক্ষী হিসেবে দোষ স্বীকার করা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৫ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন।
রায়ের পাঠ ও আদালতের উপস্থিতি
দুপুর ১২:৪০ মিনিটে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্যানেলের আরেক সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবীরা এবং জুলাই–আগস্টের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই প্রমাণিত। এর মধ্যে একটিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং বাকি দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ছিল, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সব মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনাকারী ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।
অন্য আসামিদের ভূমিকা
এই মামলায় আরও দুই আসামি ছিলেন:
-
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
-
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
মামুন একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবং রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনাল তার সাক্ষ্য গ্রহণ করে আলোকপাত করেছে, কীভাবে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনালের মানবিক ও আইনি দিক
-
আল-মামুনের দোষ স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা বিচার প্রক্রিয়াকে মানবিক দিক থেকে শক্তিশালী করেছে।
-
শহিদ ও আহত পরিবাররা এই রায়কে দীর্ঘদিনের ক্ষত ও বেদনার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।
-
রায় ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী শক্তিকে দমন করার বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো—ফ্যাসিবাদ যত শক্তিশালী হোক, একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এটি ন্যায়বিচারের মাইলফলক।”
তিনি রায়টিকে ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা ব্যক্তিকে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না দেওয়ার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ধানমন্ডি ৩২ ও নিরাপত্তা
রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২-এ কিছু বিক্ষোভকারী এক্সকাভেটর নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাউন্ড গ্রেনেড ও ইটের আঘাতের মধ্যে কিছু আহত হয়।
ট্রাইব্যুনাল এবং আশেপাশের এলাকা কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
মানবিক বিশ্লেষণ
-
শহিদ ও আহতদের স্বীকৃতি: দীর্ঘদিনের ক্ষত ও বেদনার আইনি প্রতিফলন।
-
রাজসাক্ষীর মানবিক ভূমিকা: আল-মামুনের স্বীকারোক্তি বিচার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী ও ন্যায়সঙ্গত করেছে।
-
সমাজে বার্তা: ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সতর্কতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়বদ্ধতা।
উপসংহার
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার রায় কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যায়ের প্রতীক, শহিদ পরিবার ও আহতদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশে এটি ন্যায়ের শিক্ষণীয় উদাহরণ এবং মানবিক ও আইনি বার্তার একটি শক্তিশালী ধ্বনি।
পাঠকের মন্তব্য