
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে শিরোপা জেতানোর পর থেকেই ইমরান খান হয়ে ওঠেন দেশটির ঘরে ঘরে পরিচিত নাম। কিন্তু বয়স ষাটের কোঠায় পৌঁছালে বিশ্বকাপজয়ী খ্যাতি, গ্ল্যামার ও আলোচিত ব্যক্তিগত জীবন তাকে আর তৃপ্তি দিচ্ছিল না। ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও নিজের একটি দৃঢ় অবস্থান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
সে সুযোগও আসে হাতে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তার তারকাখ্যাতিকে কাজে লাগাতে চাইলেও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ইমরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তিনি নিজেই গড়ে তোলেন নতুন রাজনৈতিক দল—‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)।
তখনকার পাকিস্তানি রাজনীতি দুই বৃহৎ পরিবারকেন্দ্রিক দলের নিয়ন্ত্রণে। নতুন দল নিয়ে রাজনীতিতে নামা মানে ছিল দীর্ঘদিন প্রান্তিক অবস্থায় থাকা, মনোযোগ পাওয়ার জন্য লড়াই করা। সাংবাদিকরা যখন তার সাক্ষাৎকার নিতেন, তখনও তারা রাজনীতির চেয়ে বেশি আগ্রহী হতেন ক্রিকেট স্মৃতি বা তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে।
তবুও সময়ের সঙ্গে ইমরান খান রাজনীতিতে গতি পেতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ব্যাপক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ইসলামাবাদে এই সমাবেশ অনুমোদন পাওয়ায় অনেকে সন্দেহ করছিলেন—সেনাবাহিনী কি সরকার পরিবর্তনে ইঙ্গিত দিচ্ছে? তবে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ফল আনতে ব্যর্থ হয়।
২০১৬ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজ শরিফের সন্তানদের নাম আসার পর ইমরান আবারও রাজপথে নেমে প্রতিবাদের ডাক দেন। পেশোয়ারে বিক্ষোভ হলেও ইসলামাবাদ অভিমুখে তার ঘোষিত ‘লং মার্চ’ আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে অনেকে মনে করতে শুরু করেন—ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান হয়তো থেমে গেছে।
ব্যক্তিগত জীবনেও তখন অস্থিরতা তুঙ্গে। বিবিসির সাবেক আবহাওয়াবিদ রেহাম খানের সঙ্গে তার বিয়ে ভেঙে যায়, সম্পর্ক তিক্ততায় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে একসঙ্গে থাকা পর্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। পরে ইমরান এই বিয়েকে নিজের জীবনের “সবচেয়ে বড় ভুল” বলে উল্লেখ করেন।
ঠিক এমন সংকটময় সময়েই ইমরান খানের জীবনে আসেন এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব—যিনি তাকে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সাফল্যের আশ্বাস দেন এবং যার সঙ্গে পরিচয়ের পর ইমরানের রাজনৈতিক যাত্রা এক নতুন মোড় নেয়।
পাঠকের মন্তব্য