![]()
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) থেকে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়।
মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য জারি হলো নতুন বিধিমালা, যা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় বুধবার (১২ নভেম্বর)।
বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এখন থেকে আর কোনো নতুন মেয়াদি স্কিম অনুমোদন দেওয়া হবে না— এটাই এই নীতির মূল পরিবর্তন।
এর পরিবর্তে শুধু বেমেয়াদি (ওপেন-এন্ড) ফান্ড গঠনের অনুমতি দেওয়া হবে, যা আন্তর্জাতিক বাজারের মতোই বিনিয়োগকারীদের জন্য অধিকতর স্বচ্ছ ও গতিশীল ব্যবস্থা তৈরি করবে।
নীতির পরিবর্তনে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা
বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গেজেট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বিধিমালা কার্যকর হলো।”
এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যদি কোনো মেয়াদি স্কিমের ইউনিটপ্রতি গড় লেনদেন মূল্য স্কিমটির ক্রয়মূল্য বা নিট সম্পদমূল্যের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি কমে যায়, তবে সেই স্কিমের ট্রাস্টি বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করতে পারবে।
ইজিএমে উপস্থিত ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এবং বিএসইসির অনুমোদনে স্কিমটি বেমেয়াদি ফান্ডে রূপান্তর বা অবসায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এই নিয়ম বিনিয়োগকারীর জন্য একপ্রকার “নিরাপত্তা জাল”— যাতে তারা অবমূল্যায়িত ফান্ডের ফাঁদে আটকে না যায়।
বিনিয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণ
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে মিউচুয়াল ফান্ড বা এর স্কিমের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে শুধুমাত্র স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে।
তবে অনুমতি থাকবে আইপিও, রাইট শেয়ার এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের।
অন্যদিকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) বা এসএমই প্ল্যাটফর্মে কোনো বিনিয়োগ করা যাবে না।
যদি কোনো কোম্পানি বিনিয়োগের পর মূল বোর্ড থেকে তালিকাচ্যুত হয় বা এটিবি বোর্ডে স্থানান্তরিত হয়, তাহলে ছয় মাসের মধ্যে সেই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হবে।
এছাড়া, ‘এ’ ক্যাটাগরির নিচে ক্রেডিট রেটিং থাকা কোনো বন্ড, ডেট সিকিউরিটিজ কিংবা শরিয়াহভিত্তিক ইন্সট্রুমেন্টে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রেক্ষাপট ও মানবিক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতায় ভুগছেন।
বিগত বছরগুলোতে অনেক মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, কেউ পেয়েছেন আংশিক মূলধন, কেউ পাননি কিছুই।
এই বিধিমালার মূল উদ্দেশ্য— বিনিয়োগকে শুধু মুনাফার হিসাব নয়, বরং দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরির ক্ষেত্রে মাইলফলক হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক (অব.) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন,
“বিএসইসির নতুন বিধিমালা বিনিয়োগকারীর সুরক্ষার পাশাপাশি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা বাড়াবে।
এতে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ফিরবে।”
???? মানবিক দৃষ্টিকোণ
পুঁজিবাজারের সাফল্য কেবল সংখ্যায় নয়, এটি সাধারণ মানুষের ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের প্রতিফলন।
একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ভাষায়, “আমি ব্যাংকের চেয়ে ফান্ডে টাকা রেখেছিলাম কারণ এতে লাভ হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সরকার অন্তত আমাদের সুরক্ষা ভাবছে।”
এই কথাগুলোই বোঝায়— অর্থনীতি কেবল গাণিতিক নয়, এটি মানুষের আশার জায়গা।
বিএসইসির এই পদক্ষেপ তাই কেবল একটি আর্থিক নীতিগত পরিবর্তন নয়; এটি বাংলাদেশের বিনিয়োগ সংস্কৃতিতে এক মানবিক পুনরারম্ভ।
পাঠকের মন্তব্য