![]()
রাজধানী ঢাকায় সোমবার (১০ নভেম্বর) গভীর রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিত্যক্ত একটি প্রাইভেট কারেও আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স জানায়,
রাত পৌনে ১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ‘রাজধানী পরিবহনের’ একটি বাসে,
এরপর রাত ২টার দিকে কাজলা টোলপ্লাজার কাছে ‘রাইদা পরিবহনের’ একটি বাসে
এবং ভোর ৪টার দিকে উত্তরা জনপথ মোড়ে একই পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে।
সবগুলো বাস তখন পার্কিং অবস্থায় ছিল—তাতে কোনো যাত্রী বা চালক উপস্থিত ছিলেন না।
ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুর্বৃত্তদের সন্দেহ, তদন্তে নেমেছে পুলিশ
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান,
“কাজলা টোলপ্লাজার কাছে রাইদা পরিবহনের বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে, এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
তবে বাকি দুই স্থানের ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে—আগুন লাগানোর উদ্দেশ্য ছিল ভয়-ভীতি তৈরি করা। সৌভাগ্যবশত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী সড়ক ও গলিপথে অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, এবং প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বসুন্ধরায় প্রাইভেট কারে আগুন: নতুন উদ্বেগ
অন্যদিকে, একই রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেট কারে আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন,
“প্রাইভেট কারটি অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত না হলেও বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।”
নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, এই ঘটনা তিনটি বাসে আগুন লাগার ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র আছে কি না,
তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: উত্তপ্ত আবহে অগ্নিসংযোগের বার্তা
ঘটনাগুলোর সময়কাল লক্ষ্য করলে দেখা যায়—
এগুলো ঘটেছে আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে রাতেই।
ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী,
সোমবার দিন ও রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিনটি বাস পোড়ানো হয়েছে
এবং ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস পোড়ানো, ককটেল বিস্ফোরণ ও রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে,
যা রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি: বৃহস্পতিবারের আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা
আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে
পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাজধানীতে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়, পরিবহন টার্মিনাল এবং বাস ডিপোগুলোতে
ইতোমধ্যে নিরাপত্তা টহল ও মোবাইল টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন—
“নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
কোনো ধরণের বিশৃঙ্খল তৎপরতা বা অগ্নিসন্ত্রাস কঠোরভাবে দমন করা হবে।”
নাগরিকদের উদ্বেগ ও মানবিক আহ্বান
ঘটনাগুলোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকে লিখেছেন— “আমরা চাই নিরাপদ রাজধানী, আগুন নয় ভয় নয়।”
যাত্রী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ বলছেন—
প্রতিটি আগুনের শিখা যেন কেবল একটি যানবাহন নয়, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিশ্বাসকেও জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা।
যে কোনো সন্দেহজনক তৎপরতা বা আগুন লাগার ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য