
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন করে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি (বিপিএম–৬) অনুসারে প্রকৃত রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান।
রেমিট্যান্স প্রবাহের জোরে এই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই (জুলাই–সেপ্টেম্বর) এসেছে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের এই উত্থান অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, “বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের পথে। রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ উভয়ই এখন স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে।”
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও একমত পোষণ করে বলেন, “রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ডলার সংকট কমেছে, এলসি খোলা স্বাভাবিক হয়েছে, বিনিময় হারও স্থিতিশীল হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে সরকারি প্রণোদনা ও বাজার স্থিতিশীলতা বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা প্রতি ডলারে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত পাচ্ছেন, যা খোলা বাজারের দামের প্রায় সমান।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, “হুন্ডি চ্যানেলে কঠোর অভিযানের পর প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।”
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল কায়উম চৌধুরী বলেন, “২০২৪ সালের আগস্টের পর রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”
আইএমএফও সাম্প্রতিক রিজার্ভ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, “রিজার্ভ সঞ্চয় আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি মূল লক্ষ্য, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শক্তি জোগাচ্ছে।”
সব মিলিয়ে, রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স—দুই সূচকের ধারাবাহিক উন্নতি দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ও আস্থার পুনরাগমন ঘটাচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য