বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে এশিয়ার পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম।
সময় সংবাদের এক প্রশ্নের জবাবে কিরিল কোমারভ বলেন,
“রূপপুরের প্রথম ইউনিট চালু হলে এটি কেবল একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, বরং বাংলাদেশের জ্বালানি স্বনির্ভরতা ও টেকসই উন্নয়নের মাইলফলক হয়ে উঠবে।”
তিনি আরও বলেন,
“ঢাকা শহরেও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। তাই আমরা বুঝতে পারি—প্রথম ইউনিটের কাজ সম্পন্ন করা এবং এর কার্যকরী পরিচালনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। রূপপুরের সাফল্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য একটি অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠবে।”
এশিয়ায় নতুন পারমাণবিক জাগরণ:
কিরিল কোমারভ জানান, একসময় এশিয়ার দেশগুলো পারমাণবিক শক্তি নিয়ে দ্বিধায় থাকলেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের পর ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যে তাদের জাতীয় জ্বালানি কৌশলে পারমাণবিক শক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এছাড়া মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কাজাখস্তান ও ফিলিপাইন পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে সক্রিয় আলোচনা চালাচ্ছে।
ভিয়েতনামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে ইতোমধ্যেই রোসাটমের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে বলে জানান কোমারভ।
ছোট আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বড় পারমাণবিক প্রকল্পের পাশাপাশি রোসাটম এশিয়ার দ্বীপাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় ছোট আকারের ভাসমান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (Floating Nuclear Plant) স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।
কোমারভ বলেন,
“যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন, সেখানে ভাসমান পারমাণবিক প্রযুক্তি হতে পারে নিরাপদ ও টেকসই সমাধান।”
এছাড়া চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্প খাতে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়ার এই সংস্থা।
বাংলাদেশের ভূমিকা:
রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক প্রতীক— এমন মন্তব্য করেন কোমারভ।
তার ভাষায়,
“বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা গোটা এশিয়ার জন্য উদাহরণ। রূপপুর শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নয়, এটি দক্ষ জনবল, আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতীক।”
পটভূমি:
বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এটি রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে, যার প্রথম ইউনিটের ক্ষমতা প্রায় ১,২০০ মেগাওয়াট।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মানবিক ও উন্নয়ন বিশ্লেষণ:
এই প্রকল্প কেবল জ্বালানি নয়, মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিদ্যুৎ সংকটে ভোগা উত্তরাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, শিল্প-কারখানার উৎপাদন বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
“রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
পাঠকের মন্তব্য