আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ সোমবার আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পুড়িয়ে হত্যার ভয়াবহ ভিডিও প্রদর্শিত হয়। শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে হাউ-মাউ করে কাঁদেন। তিনি লাশের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “ওই যে আমার ছেলে, ওই যে আমার ছেলে।”
ভিডিওতে দেখা যায়, হত্যার পর কয়েকজনের লাশ একটি রিকশায় চ্যাংদোলা করে তোলা হয় এবং পরে স্তুপে জমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের তীব্রতা বাড়াতে লাশের মধ্যে কাঠের বেঞ্চও নিক্ষেপ করা হয়।
শহীদ আস-সাবুরের বাবা সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, “গত বছর ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পোড়া টি-শার্ট এবং শরীরের সঙ্গে থাকা মোবাইল থেকে সিম বের করে লাশ শনাক্ত করা হয়। আমি দুটি ভিডিও সংগ্রহ করেছি, যা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উস্কানিতে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশে এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় পুলিশ তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তিনি ন্যায়বিচার চেয়ে বলেন, “যেভাবে আমার ছেলেকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই ধরনের শাস্তি চাই।”
আজকের শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন, আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা আছে। একটি আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায়, আর অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারের একটি অংশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
পাঠকের মন্তব্য