অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে যুগোপযোগী সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীবান্ধব, স্বচ্ছ ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গতি আসে এবং আন্তর্জাতিক মানে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা তৈরি হয়।
সনদ সত্যায়নে অনলাইন বিপ্লব
বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সনদ অনলাইনে সত্যায়নের কার্যক্রম চালু হয়েছে। আগে যেখানে দূতাবাসে গিয়ে পুনরায় সত্যায়ন করতে হতো, এখন একবার অনলাইনে সত্যায়ন করলেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা গ্রহণযোগ্য হবে। এতে সময়, অর্থ এবং হয়রানি—সবই কমে গেছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কাঠামোগত পরিবর্তন
শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ও সেবা প্রদানের গতি বাড়াতে সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে দুইটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০২৪ সালের অক্টোবরে নেয়া এই পরিকল্পনা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
শিক্ষক বদলিতে ডিজিটাল সুবিধা
বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য অনলাইন বদলি কার্যক্রম চালু হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত থেকে সৃষ্ট একঘেয়েমি কমছে এবং নতুন পরিবেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বেতন-ভাতা প্রদানে ইএফটি পদ্ধতি
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এখন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) এর মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। আগে ম্যানুয়ালি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হতো; এখন তা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হয়ে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক প্রভাব কমানো
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালার খসড়া প্রস্তুত হয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং আগস্টের মধ্যেই তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজেট ও অবকাঠামো উন্নয়ন
২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
এছাড়া ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও যবিপ্রবিতে আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে গবেষণা ও স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে।
উপবৃত্তির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
চলতি অর্থবছরে ৫১ লাখ মাধ্যমিক, ৮ লাখ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার স্নাতক পর্যায়ের অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অন্যতম বড় পদক্ষেপ।
পাঠকের মন্তব্য