সম্পাদনা ডেস্ক বিশ্ব প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল (Apple Inc.) পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের পথে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিল। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খনিজ প্রযুক্তি কোম্পানি এমপি ম্যাটেরিয়ালস (MP Materials Corp.)-এ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহৃত (recycled) রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হবে এবং এগুলো অ্যাপলের ডিভাইসে ব্যবহৃত হবে।
রিসাইকেল্ড রেয়ার আর্থের ভরকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি অনুযায়ী, এমপি ম্যাটেরিয়ালস টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে তাদের ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স’ ফ্যাসিলিটিতে ম্যাগনেট তৈরি করবে, যার কাঁচামাল সংগ্রহ করা হবে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন পাস থেকে প্রক্রিয়াকৃত রিসাইকেল্ড রেয়ার আর্থ উপাদান থেকে। এই উপাদানগুলো আসবে শিল্প বর্জ্য ও পুরনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ভাঙ্গা ম্যাগনেট থেকে। এমপি ম্যাটেরিয়ালস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেমস লিটিনস্কি বলেন, “এই অংশীদারিত্ব শুধু ম্যাগনেটিক ব্যবসাকে সম্প্রসারিতই করবে না, বরং আমেরিকার শিল্প সক্ষমতা ও সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা আরও মজবুত করবে।”
রেয়ার আর্থ খাত ও অ্যাপলের পরিবেশনীতি রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট আজকের দিনে আইফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টওয়াচ, এমনকি বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উইন্ড টারবাইনের মতো প্রযুক্তিতে অপরিহার্য। তবে এই উপাদান আমদানির উপর নির্ভরশীলতা মার্কিন শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
২০২৪ সালে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS)-এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪৫,০০০ টন রেয়ার আর্থ অক্সাইড উৎপাদন করেছিল, যার বাজারমূল্য ছিল ২৬০ মিলিয়ন ডলার। তবে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের রেয়ার আর্থ উপাদান আমদানি করতে হয়েছে, যা আমদানিনির্ভরতার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। এমন প্রেক্ষাপটে অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান পুনর্ব্যবহৃত রেয়ার আর্থ ব্যবহারে নেতৃত্ব দিলে তা দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ও পরিবেশ—দুইয়ের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
অ্যাপলের টেকসই লক্ষ্য: ১০০% রিসাইকেলড উপাদান ২০২৪ সালে অ্যাপলের ব্যবহৃত রেয়ার আর্থ উপাদানের ৮০ শতাংশই ছিল রিসাইকেলড। ২০২৫ সালের মধ্যে তারা সব ব্যাটারিতে ১০০% রিসাইকেলড কোবাল্ট, সব সার্কিট বোর্ডে ১০০% রিসাইকেলড টিন ও গোল্ড এবং সব ডিভাইসে ১০০% রিসাইকেলড রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট ব্যবহারের লক্ষ্য ঘোষণা করেছে।
অ্যাপলের এই উদ্যোগ তার ২০৩০ সালের ‘নেট জিরো’ টার্গেটের অংশ, যেখানে তারা স্কোপ ১, ২ ও ৩-ভিত্তিক কার্বন নিঃসরণ ৭৫% কমিয়ে বাকি অংশ অফসেট করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিনিয়োগ বাজারে প্রতিক্রিয়া এই ঘোষণার পর অ্যাপলের শেয়ারদর সামান্য বৃদ্ধি পেলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনো ২০২৫ সালে ১৬% মূল্যহ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে, এমপি ম্যাটেরিয়ালস-এর শেয়ার ২০% পর্যন্ত বেড়ে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের চমকপ্রদ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে। এখন, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং অ্যাপলের সম্মিলিত সমর্থনে এমপি ম্যাটেরিয়ালস দেশের সাসটেইনেবল প্রযুক্তি শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠছে।
উপসংহার: অ্যাপল ও এমপি ম্যাটেরিয়ালস-এর এই অংশীদারিত্ব শুধু একটি ব্যবসায়িক চুক্তি নয়—এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা পরিবেশ, প্রযুক্তি ও আমেরিকার শিল্প স্বাধীনতা অর্জনের পথে বড় মাইলফলক। এই ধরণের পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হবেন আরও টেকসই উদ্যোগ নিতে। ✍️ EntrepreneurBD.com – টেকসই বাংলাদেশ গড়ার পথে উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা। আপনার মতামত লিখুন নিচে ????
পাঠকের মন্তব্য