ই-বাংলাদেশ ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গ্লোবাল ফিনডেক্স ২০২৫ প্রতিবেদনে এই সাফল্যের চিত্র স্পষ্ট। বর্তমানে বিশ্বে ৮৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মোবাইল ফোনের মালিক, আর্থিক অ্যাকাউন্ট খোলার হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও দুইটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, যা বিশ্বব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে থমকে দিতে পারে।
চ্যালেঞ্জ এক: ১৩০ কোটি মানুষের এখনো কোনো আর্থিক অ্যাকাউন্ট নেই
যদিও অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে এবং তারা নিজেদের নামে নিবন্ধিত সিম ও জাতীয় পরিচয়পত্রও ব্যবহার করেন, তবুও প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ এখনো কোনো ব্যাংক বা মোবাইল মানি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন না। অথচ তাদের কাছে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রাথমিক উপকরণগুলো বিদ্যমান।
এই জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজন:
সহজলভ্য ও প্রাসঙ্গিক ডিজিটাল আর্থিক পণ্য,
নিরাপদ ও সাশ্রয়ী লেনদেনের সুযোগ,
এবং দুর্নীতিমুক্ত, ভোক্তা-সুরক্ষামূলক নীতি।
এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
চ্যালেঞ্জ দুই: নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টধারীদের সক্রিয় করা
অন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, যেসব মানুষ ইতোমধ্যে ব্যাংক বা মোবাইল অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, কিন্তু তা নিয়মিত ব্যবহার করছেন না, অথবা এখনো অনানুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে কীভাবে কার্যকরভাবে আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা যায়।
এর জন্য প্রয়োজন:
ইন্টারঅপারেবল ফাস্ট পেমেন্ট সিস্টেম, যাতে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের মধ্যে সহজেই লেনদেন করা যায়,
ভোক্তা সুরক্ষা আইন ও নীতিমালা, যাতে গ্রাহক আস্থা বাড়ে,
এবং আর্থিক শিক্ষার বিস্তার, যাতে মানুষ ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থাকে আত্মস্থ করতে পারে।
সমাধানের পথ: প্রযুক্তি ও নীতির সমন্বয়
প্রযুক্তি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দরজা খুলে দিচ্ছে ঠিকই, তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে দৃঢ় অবকাঠামো, ন্যায্য নিয়মনীতি ও সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ:
গ্রামীণ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতে হবে,
নারীদের জন্য বিশেষ আর্থিক পণ্য উন্নয়ন করতে হবে,
বিশ্বস্ত ও সাশ্রয়ী সেবার প্রসার ঘটাতে হবে,
এবং সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (PPP) প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস
গ্লোবাল ফিনডেক্স ২০২৫ আমাদের সাফল্যের পাশাপাশি ঘাটতির দিকগুলোও দেখিয়ে দিয়েছে। ১৩০ কোটির বেশি মানুষকে আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে রেখে কোনো টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সঠিক পরিকল্পনা, ভোক্তাবান্ধব পণ্য এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুধু উন্নয়নের হাতিয়ার নয়, বরং হবে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার অনন্য মাধ্যম।