নিউজ ডেস্ক
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম ‘জাতীয় সমাবেশে’ দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
সমাবেশে তিনি আরও বলেন, “চাঁদাবাজি চলবে না, দুর্নীতি আমরা মেনে নেব না। এ দেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, জনগণের সেবায় নিবেদিত।”
বক্তব্যের শুরুতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান শফিকুর রহমান। আশপাশের নেতাকর্মীরা তাকে সহায়তা করেন এবং তিনি আবার দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুরু করেন। পরে আরেকবার পড়ে গিয়ে বসেই বক্তব্য শেষ করেন।
তিনি আরও বলেন, “যদি আবু সাঈদের মতো শহীদরা বুক পেতে দাঁড়াতেন না, তাহলে আমরা আজকের বাংলাদেশ দেখতাম না। যারা আজ দাবি করছে, তখন তারা কোথায় থাকতেন? যারা ত্যাগ করেছে, তাদের অবজ্ঞা নয়, সম্মান করতে হবে। রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বজায় রেখে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করতে হবে।”
দুর্নীতি ও বিশেষ শ্রেণির সুবিধাভোগী রাজনীতি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী যদি সরকারের দায়িত্ব পায়, তাহলে কোনো মন্ত্রী, এমপি প্লট নেবে না, করমুক্ত গাড়ি চড়বে না, সরকারি টাকা নিজের হাতে নেবে না। বরং ১৮ কোটি মানুষের সামনে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।”
জনগণের মুক্তির লড়াই
শফিকুর রহমান বলেন, “এই লড়াই কোনো অভিজাত শ্রেণির জন্য নয়। রাস্তার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা বাগানের শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষকের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য আমাদের সংগ্রাম।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে—যেখানে শিশু, কিশোর, যুবক, মা-বোন, শ্রমিক, ছাত্র, ব্যবসায়ী সবাই নিরাপদ ও সম্মানিত বোধ করবে।”
সমাবেশের পটভূমি ও দাবি
সাধারণত বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশ করলেও এবারই প্রথমবার জামায়াত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবার।
শুক্রবার রাত থেকেই নেতাকর্মীরা বাস, পিকআপ ও ট্রেনে করে ঢাকা পৌঁছান। ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে চারটি ট্রেন ভাড়া করে অংশগ্রহণকারীদের আনা হয়।
শনিবার সকাল থেকেই উদ্যানে জমে ওঠে জনস্রোত। সকাল ১০টায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী সমাবেশ শুরু হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সাত দফা দাবি:
১. সব গণহত্যার বিচার
২. প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার
৩. জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন
৪. অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার পুনর্বাসন
৫. সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ
৭. নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা
উপসংহার:
এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামি রাজনৈতিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা দিতে চেয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, সঙ্গে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের আহ্বান—দলের রাজনৈতিক কৌশলে নতুন মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।