লিখেছেন: জাহিদুজ্জামান সাঈদ
আমরা সবাই দিনে ২৪ ঘণ্টা পাই। তাহলে কেন কেউ কেউ নিজের জীবন বদলে ফেলেন আর কেউ রয়ে যান আগের জায়গায়? সম্ভবত এই পার্থক্যের উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের সবার কাছে থাকা একটিমাত্র ঘন্টার ব্যবহারে।
এক ঘণ্টা — যা বদলে দিতে পারে সবকিছু
এক ঘণ্টা। ৬০ মিনিট। ৩,৬০০ সেকেন্ড। আপনি যেভাবেই হিসেব করুন না কেন, এটি আপনার দিনের খুবই ছোট একটি অংশ। কিন্তু এই ক্ষুদ্র সময়টুকু—যদি আপনি প্রতিদিন সচেতনভাবে ব্যয় করেন—তাহলে এর প্রভাব হতে পারে বিশাল।
বেশিরভাগ মানুষ এই সময়টুকু ব্যয় করেন অজান্তেই—সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে, ইউটিউবে ঘুরে, টিভি দেখে বা সময় অপচয় করে। অথচ আপনি যদি এই এক ঘণ্টা নিজেকে গড়তে দেন, তাহলে আপনার জীবনটাই বদলে যেতে পারে।
এটি কোনো বিপ্লব নয়। এটি নিঃশব্দ এক পরিবর্তন। আর এটি হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
আমরা এটা করি না কেন?
কারণ খুব জটিল নয়—এই সময়টাকে আমরা “ঐচ্ছিক” মনে করি।
খাবার খাওয়া, ঘুমানো বা অফিসের কাজের মতো এই সময়টা বাধ্যতামূলক নয়। এটা আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে না। ফলে আমরা সেটিকে গুরুত্ব দিই না। কিন্তু আসল সত্যি হলো—এই “ঐচ্ছিক” সময়টাই হতে পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
পরিবর্তনের সহজ অঙ্ক
চলুন হিসাব করি:
প্রতিদিন ১ ঘণ্টা = সপ্তাহে ৭ ঘণ্টা
সপ্তাহে ৭ ঘণ্টা = মাসে ৩০ ঘণ্টা+
বছরে ৩৬৫ ঘণ্টা — অর্থাৎ প্রায় ১০ সপ্তাহের সমান সময়!
এই সময়টা আপনি যদি কোনো এক জ্ঞান, দক্ষতা বা অভ্যাস অর্জনে দেন—এক বছর পর আপনি নিজেই নিজের মধ্যে এক নতুন রূপ দেখতে পাবেন।
সফলদের অভ্যাস
বিশ্বের অনেক সফল মানুষ প্রতিদিন এক ঘণ্টা শেখার নিয়ম মেনে চলেন।
বিল গেটস একে বলেন “৫ ঘণ্টার নিয়ম” — সপ্তাহে পাঁচ দিন এক ঘণ্টা করে শেখা, চিন্তা করা এবং বড় হওয়া। ইলন মাস্ক এই সময়েই রকেট সায়েন্স শিখেছেন। ওপরা উইনফ্রেও তার জীবন গড়েছেন এক ঘণ্টা করে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে।
এটা পাগলামি নয়। এটা উদ্দেশ্যপূর্ণ সময় ব্যবস্থাপনা।
আপনার জন্য কিভাবে কাজ করবে?
জীবন বদলাতে কোনো বিপ্লব লাগবে না। শুধু এক ঘণ্টার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই যথেষ্ট।
শুরু করুন এভাবে:
একটি লক্ষ্য ঠিক করুন: একসাথে অনেক কিছু নয়। একটি জিনিসেই ফোকাস করুন।
সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন একই সময়ে সময়টা নির্দিষ্ট করে নিন।
ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকুন: ফোন সাইলেন্ট করুন, মনোযোগ দিন।
পাঠ্যক্রম বা অগ্রগতি লিখে রাখুন: আপনি কতোদূর এসেছেন সেটা জানলে চলতে সুবিধা হয়।
শুরুতে কিছুদিন বাদ গেলেও, একমাস, তিনমাস বা একবছর পরে আপনি নিজেই আপনার পরিবর্তন দেখে চমকে যাবেন।
ভবিষ্যতের আপনি অপেক্ষা করছেন
এক বছর পরের “আপনি” হয়তো আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞ হবেন। আপনি শুধু সময় কাটাচ্ছেন না—আপনি বিনিয়োগ করছেন।
তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন:
আমি যদি আজ থেকেই প্রতিদিন ৬০ মিনিট সময় নিজেকে দিই তাহলে কী হতে পারে?
আপনার কাছে সময় আছে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
সাইডবার: আজই যেখান থেকে শুরু করতে পারেন
কোডিং বা ডিজাইন শেখা
প্রতিদিন জার্নাল লেখা
প্রতি মাসে অন্তত ২টি বই পড়া
ব্লগ বা পডকাস্ট শুরু করা
মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম চর্চা
কারণ এক ঘণ্টা শুধু সময় নয়, এটি একটি বার্তা—
আপনি বিশ্বাস করেন, আপনার জীবন গড়ার মতোই মূল্যবান।