![]()
জুলাই–আগস্টের গণআন্দোলনের সহিংসতা ঘিরে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রভাবশালী ১৭ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ঘটনা নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে—যেখানে অভিযোগের দায়ে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে এত সংখ্যক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আদালতের মুখোমুখি করা হলো।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। প্রিজনভ্যানের দরজা খুলতেই একে একে আসামিদের নামিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো এলাকায় তখন অসম্ভব সতর্কতা ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এদিন ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে মামলার অগ্রগতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বহু পরিবারের আর্তনাদ, আন্দোলনের দিনগুলোতে প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা—সব মিলিয়ে এই শুনানিকে অনেকেই যুগান্তকারী ধাপ হিসেবে দেখছেন।
কারা আছেন আসামির তালিকায়—
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া ১৭ জন হলেন—
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক,
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি,
সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক,
সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী,
সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু,
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম,
সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক,
সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান,
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন,
জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু,
সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক,
সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম,
সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম,
সাবেক এমপি ফারুক খান,
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী,
সাবেক শিল্প–বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান,
এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় এটি নজিরবিহীন একটি প্রক্রিয়া—যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা সময়কার সিদ্ধান্ত, ভূমিকা ও সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের আদালতে দাঁড়াতে হচ্ছে।
অনেক স্বজন তাদের হারানো পরিবারের সদস্যের ছবি হাতে নিয়ে আদালত ভবনের আশপাশে অবস্থান নেন। দীর্ঘ সময়ের জমে থাকা বেদনা ও ন্যায়বিচারের আশায় তাদের চোখে ছিল প্রত্যাশা ও কান্নার মিশ্র অনুভূতি। মানবতার স্বার্থে, সত্যের স্বার্থে এবং গণআন্দোলনের নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ।
ট্রাইব্যুনালে আজকের শুনানি শেষে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে আগ্রহ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য