![]()
পাবনার ঈশ্বরদীতে রাজনৈতিক উত্তেজনা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর চরগড়গড়ি আলহাজ মোড় এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়—আর সেই আতঙ্কের রেশ এখনো কাটেনি স্থানীয় মানুষের মনে।
ঘটনাস্থলে পড়েছিল ভাঙা মোটরসাইকেলের অংশ, পুড়ে যাওয়া গাড়ি, আর চারদিকে ছড়িয়ে ছিল রক্তের দাগ। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পরপরই হঠাৎ গোলমালের শব্দ শুনে সবাই ঘর থেকে বের হন। তারপরই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক—ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
পুলিশ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের বরাতে জানা যায়, বুধবার সাহাপুর ইউনিয়নে জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি হাফেজ ইকবাল হোসেনসহ দুইজনকে মারধর করেন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধার লোকজন। এরই প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী–আটঘরিয়া) আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ ও নির্বাচনী প্রচার চালানো হচ্ছিল।
সেই সময় বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের অনুসারীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ জামায়াতের। হামলায় অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের গাড়ি এবং তাদের প্রায় ২০–২৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে।
গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ
হামলার পরপরই দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে যায়। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হাতাহাতি। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধদের কয়েকজন গুলিবর্ষণ করে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু মোটরসাইকেলে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের অনেককে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঈশ্বরদী ও পাবনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহতদের মধ্যে মক্কেল মৃধা, মনিরুল ইসলাম, লালন মৃধা, আলীম হোসেন বাঁধনসহ আরও অনেকে রয়েছেন।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন,
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করছিলাম। বিএনপি প্রার্থীর লোকজন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমাদের গাড়ি ও শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। ৬০–৭০ জন আহত হয়েছেন।”
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“জামায়াতের লোকজনই পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। আমাদের ওপরই গুলি ও হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত ১৫–২০ জন আমাদের নেতাকর্মী আহত।”
পুলিশের ভূমিকা
ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নূর বলেন,
“রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এমন উত্তেজনা দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে এই এলাকায় আরও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে।
পাঠকের মন্তব্য