![]()
বাংলাদেশ ও ভুটানের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, আস্থা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আবারও নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে কুড়িগ্রাম–গেলেফু করিডরকে দুই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের অন্যতম শক্তিশালী সংযোগবিন্দু হিসেবে তুলে ধরেন। এই করিডর শুধু বাণিজ্য বা যোগাযোগ নয়; বরং সীমান্ত পেরিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে—এমন মানবিক বার্তাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে।
আজ রোববার ঢাকার একটি হোটেলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন–এর সঙ্গে বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, পাহাড়–নদী–সবুজে ঘেরা দুই দেশের যৌথ ভৌগোলিক অবস্থান নতুন প্রজন্মের জন্য শান্তি, উন্নয়ন ও মানুষের সমৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে।
গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি ও কুড়িগ্রাম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল—দুই দেশের স্বপ্নের প্রকল্প
ভুটানের নির্মাণাধীন গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম স্পেশাল ইকোনমিক জোন—দুই প্রকল্পই ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেরিং তোবগে আশা প্রকাশ করেন, এই দুই উদ্যোগ একসঙ্গে যুক্ত হলে আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন স্রোত সৃষ্টি হবে। ভুটানের প্রকৃতি–নির্ভর টেকসই উন্নয়ন মডেল আর বাংলাদেশের বৃহৎ বাজার ও অবকাঠামোগত অগ্রগতি—এই জুটি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির পরবর্তী যুগের ভিত্তি।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন,
“কুড়িগ্রাম ও গেলেফু আমাদের যৌথ অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের পরিপূরক ইঞ্জিন হয়ে উঠতে পারে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বাজার, দক্ষ জনশক্তি, উন্নত সমুদ্রবন্দর, আঞ্চলিক সংযোগ—সবই ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশে ভুটানি বিনিয়োগে নতুন দ্বার
বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থিক, শিল্প ও সেবা খাতে ভুটানি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেন। তিনি জানান, এসব সুযোগ সরেজমিনে যাচাই ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে খুব দ্রুতই ভুটান থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।
এ উদ্যোগ শুধু দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কই জোরদার করবে না; বরং সীমান্ত এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান, বাণিজ্য, পরিবহন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে—যা সরাসরি মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত।
বিডার সংস্কার ও উন্নয়ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয় বৈঠকে
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও সংস্কারগুলো উপস্থাপন করা হয়—
-
কর কাঠামোর উন্নয়ন
-
মূলধন প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার সহজীকরণ
-
বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন
-
ব্যবসাবান্ধব নীতিগত সহায়তা
এই উদ্যোগগুলো ভুটানসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরছে।
ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব
বৈঠকে দুই পক্ষই স্বীকার করেন—বাংলাদেশ ও ভুটানের বন্ধুত্ব শুধু বাণিজ্য নয়; মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি, পারস্পরিক সম্মান ও আস্থার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এই বন্ধুত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবিক উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতের যে লক্ষ্যে দুই দেশ এগিয়ে চলছে, কুড়িগ্রাম–গেলেফু করিডর সেই অভিযাত্রায় নতুন স্পন্দন, নতুন সম্ভাবনা এবং নতুন সহযোগিতার দ্বার খুলে দেবে—এমন প্রত্যাশা দুই দেশের নেতার কাছেই উঠে এসেছে।
পাঠকের মন্তব্য