![]()
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে, তা সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে অন্যতম তীব্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী—যেখানে শীতলক্ষ্যা নদীর নিচ দিয়ে একটি সম্ভাব্য ফল্টলাইন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ ড. মো. জিল্লুর রহমান এক বিশেষ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন—বাংলাদেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প নতুন নয়, তবে আজকের ভূমিকম্পটি তুলনামূলক বেশি তীব্র অনুভূত হয়েছে। আর এ কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
“আজকের কম্পন গত ৫০–৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ” — বিশেষজ্ঞের মত
ড. জিল্লুর রহমান বলেন,
“আজকের ভূমিকম্পটির তীব্রতা গত ৫০–৬০ বছরের মধ্যে অন্যতম বেশি। আমরা সাধারণত মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নিয়মিতই দেখি, কিন্তু এবারেরটি মানুষের শরীর ও ভবনে যে কম্পন অনুভূত করিয়েছে, তা ছিল বেশি শক্তিশালী।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, নরসিংদীর মাধবদী অঞ্চলের নিচ দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী একটি লিনিয়ার ধারা নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যা সম্ভাব্য ফল্টলাইনের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। আজকের ভূমিকম্প সেই ফল্টলাইনের সঞ্চালন থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে।
“৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হওয়ার কথা নয়—তবে বিপদের কারণ রয়েছে”
ড. জিল্লুর রহমান আরও বলেন,
“বাংলাদেশ মাঝারি মানের ভূমিকম্প–প্রবণ দেশ। এখানে ৫–৬ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আতঙ্কের বিষয়টি বাড়ছে ভবনের দুর্বলতার কারণে।”
বাংলাদেশে অতীতে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার বড় ভূমিকম্প ঘটেছে—
-
১৮৮৫ সালের মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প
-
১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প
অতএব ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিল্ডিং কোড না মানার ফলেই বেশি ক্ষতি
অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের মতে, মূল সমস্যা কাঠামোগত নিরাপত্তাহীনতা।
তিনি বলেন—
“নগরবাসী ভূমিকম্পে যতটা ভয় পায়, ভবন নির্মাণের সময় সেই ভয় বা সচেতনতা আর থাকে না। ফলে বিল্ডিং কোড মানা হয় না, এবং ছোট–মাঝারি ভূমিকম্পেই ভবনে ফাটল, প্লাস্টার খসা, রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে।”
আজকের ভূমিকম্পেও ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় ভবন হেলে পড়া, ফাটল, প্লাস্টার ধসে পড়া, সিঁড়ি ভেঙে পড়ার মতো ঘটনার খবর এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন—যদি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতো, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত আরও ভয়াবহ।
মানুষের আতঙ্কই এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি
মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে সাধারণত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি, ভবন থেকে ঝাঁপ দেওয়ার মতো বিপজ্জনক আচরণের কারণে হতাহত বেশি হয়।
আজকের ভূমিকম্পেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কে লাফিয়ে পড়ে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সচেতনতা না বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরও বাড়বে
বিশেষজ্ঞের মতে—
“এখনই যদি আমরা সচেতনতা বাড়াতে না পারি, বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে না মানি, তাহলে ভবিষ্যতে আজকের মতো মাঝারি ভূমিকম্পেও শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।”