![]()
আজ শুক্রবার সকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত ভয়াবহ ভূমিকম্প কয়েক মুহূর্তেই কেড়ে নিল তিনটি প্রাণ। ঢাকাসহ নরসিংদী, গাজীপুরে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। রাজধানীজুড়ে শোক–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, হাসপাতালগুলোতে চলছে দীর্ঘশ্বাস আর স্বজনহারা মানুষের আহাজারি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকালে ঢাকায় ভূমিকম্পের পর মিটফোর্ড হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে—রাফিউল ইসলাম ও সবুজ (৩০)। তৃতীয় নিহত ব্যক্তি মাত্র ৮ বছরের এক শিশু, যার পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
পুরান ঢাকায় রেলিং ভেঙে মৃত্যু
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন জানান, পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ভূমিকম্পের সময় তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়—২২/সি কেপিগোজ স্ট্রিটের সরু গলিতে রক্তের দাগ, ভেঙে পড়া রেলিং সরাতে ব্যস্ত উদ্ধারকর্মীরা। শোক আর স্তব্ধতার মাঝে দাঁড়িয়ে মানুষজন জানান, কয়েক সেকেন্ডের কম্পনেই পুরো গলি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
একজন স্থানীয় যুবক সজীব প্রথম আলোকে বলেন,
“ভূমিকম্পের সময় সবাই ছোটাছুটি করছিল। হঠাৎ দেখি রেলিং ভেঙে তিনজন পড়ে গেলেন। শিশুটিকে দেখে আর সহ্য হচ্ছিল না। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।”
হাসপাতালে একের পর এক আহত রোগী
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে—
-
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ১০ জন
-
গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ১০ জন
-
নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আহত ৪৫ জন
—এদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদীর ১০০ শয্যা হাসপাতালে আরও ১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে দেখা যায়, ভীত–সন্ত্রস্ত অভিভাবকদের কান্না। ভূমিকম্পের সময় শিশুকে আঁকড়ে ধরে দৌড়াতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। হাসপাতালের এক করিডোরে কান্নায় ভেঙে পড়া এক মায়ের দৃশ্য সবার চোখে পানি এনে দেয়—ভীতসন্ত্রস্ত শিশুকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, “কম্পনটা আবার হবে না তো?”
গুরুতর আহত আরও আছে কি না—চলছে অনুসন্ধান
ঢাকা সদর জোন–১ এর জোন কমান্ডার এনামুল হক বলেন,
“ভবনের ভেতরে কেউ আটকে আছে কি না, আমরা খোঁজ করছি। উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।”
পুরান ঢাকার পুরোনো, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে। অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন, আবার কেউ ভবনে উঠতে ভয় পাচ্ছেন।
দেশজুড়ে আতঙ্ক ও অস্থিরতা
ভূমিকম্পটি অনুভূত হওয়ার পর রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় মানুষ ঘর-বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা—অনেকেই জানিয়েছেন ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে পড়ার কথা, কেউ জানিয়েছেন বাসার দেয়াল ফেটে যাওয়ার ঘটনা।
গাজীপুর ও নরসিংদীতেও এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার বেশ কিছু জায়গায় মানুষ রাস্তায় নেমে ছোটাছুটি করেছে।
শুক্রবারের এই ভূমিকম্প ইতোমধ্যে দিনজুড়েই মানুষের মনে আতঙ্কের ছায়া ফেলেছে। জরুরি বিভাগ, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীদের ব্যস্ততা থামছেই না।
পাঠকের মন্তব্য