![]()
ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর গল্প ছিল প্রায় একই রকম—বাংলাদেশ এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে জয় হাতছাড়া করত। সেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার পাশ কাটিয়ে অবশেষে ২২ বছর পর এল কাঙ্ক্ষিত জয়। শেখ মোরসালিনের একমাত্র গোলে লাল-সবুজরা পেল ঐতিহাসিক সাফল্য।
মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। ভারত একমাত্র সুযোগ পায় মিতুল মারমার এক ভুলে। তবে বিরতির পর চিত্র বদলে যায়—দ্বিতীয়ার্ধে একচেটিয়া চাপ তৈরি করে ভারত। মাঝে মাঝে পাল্টা আক্রমণ করলেও বাংলাদেশ পুরোটা সময় রক্ষণভাগে সতর্কতা বজায় রাখে এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়।
২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে মাতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর বহুবার কাছাকাছি গিয়েও আর জয়ের দেখা মেলেনি। চলতি বছরের মার্চে শিলংয়ে দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল গোলশূন্য ড্রয়ে।
১১তম মিনিটেই ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পাল্টা আক্রমণ থেকে রাকিব হোসেন বাম দিক দিয়ে আকাশ মিশরাকে কাটিয়ে ক্রস পাঠান ডি-বক্সে। ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং এগিয়ে এসে হঠাৎ পেছন ফিরে ভুল করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান মোরসালিন।
২৭ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তারিক কাজী, বদলি হিসেবে নামেন শাকিল আহাদ তপু। কিছুক্ষণ পর মিতুলের ভুলে ভারত গোলের ভালো সুযোগ পেলেও ডি-বক্সের বাইরে থেকে লালিয়ানজুয়ালা চাংতের নেওয়া শট অবিশ্বাস্য হেডে ঠেকিয়ে দেন হামজা।
পরে তপু বর্মনের ফাউলকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়, রেফারি উভয় দলকে একটি করে হলুদ কার্ড দেখান।
৪৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন হামজা। দারুণ ফার্স্ট টাচের পর তার ভলিটি সামান্য বাইরে চলে গেলে হতাশায় ভুগতে হয় বাংলাদেশকে।
দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরাতে ভারত আক্রমণের পর আক্রমণ চালায়। বদলি মহেশ সিংয়ের শট দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। মাঝমাঠে হামজা ছিলেন দেয়ালসদৃশ, বারবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দেন।
৬৫ মিনিটে মোহাম্মাদ সানানের জোরালো শট বাউন্স খেয়ে বিপদ তৈরি করলেও মিতুল নিরাপদে ধরেন। খানিক পর জায়ান-মোরসালিনের বদলে মাঠে নামেন তাজ উদ্দিন ও শাহরিয়ার ইমন। শাকিল আহাদ তপুও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন, তবে তার শট ছিল দুর্বল।
৮১তম মিনিটে আরও একটি সুযোগ আসে—ইমনের ক্রসে ফাহিম হেড নিতে গেলে বল ঝিঙ্গানের গায়ে লেগে কর্নার হয়। বাংলাদেশ দাবি করেছিল হ্যান্ডবল, কিন্তু রেফারি সাড়া দেননি।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারত একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত রাখে মিতুলকে, তিনিও বারবার দলকে রক্ষা করেন। অতিরিক্ত সময়ে বাংলাদেশেরও দ্বিতীয় গোলের সুযোগ এসেছিল—রাকিবের থ্রু পাস ধরে ফাহিম বক্সে ঢুকে পড়লেও তার শট শেষ মুহূর্তে ব্লক করে ভারতীয় রক্ষণ।
২২ বছরের অপেক্ষা শেষে অবশেষে আনন্দের রাত—বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়।
পাঠকের মন্তব্য