
চীন জানিয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি ও চীনা স্বপ্নের মধ্যে গভীর মিল রয়েছে, যা দুই দেশের সমৃদ্ধির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে এবং বিশেষ করে ঢাকা ও গুয়াংজুর মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গুয়াংজু মিউনিসিপ্যাল পিপলস গভর্নমেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অফিসের উপমহাপরিচালক লিউ লিউ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই অভিন্ন ভাবনা গুয়াংজু ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুয়াংজুর হিলটন হোটেলে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিক্যাব) সফররত প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি এ কথা বলেন।
লিউ বলেন, “বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বের ইতিহাস শতাব্দীপ্রাচীন। সুয়ানজাং ও ঝেং হি’র মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নতির পথে রয়েছে।”
গুয়াংজুর উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে লিউ জানান, শহরটি একটি আধুনিক, বাসযোগ্য ও প্রাণবন্ত আন্তর্জাতিক মহানগরীতে পরিণত হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল ও ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় গুয়াংজু।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী—সিল্ক রোডের ঐতিহ্যবাহী চেতনা এগিয়ে নিতে এবং পারস্পরিক কল্যাণ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে চাই।”
লিউ গুয়াংজুর তিনটি প্রধান বৈশ্বিক ভূমিকা তুলে ধরেন—একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে, যা ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত; একটি বৈশ্বিক পরিবহন ও লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে, যেখানে রয়েছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স; এবং একটি আন্তর্জাতিক বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে, যেখানে ৬৯টি কনস্যুলেট ও ১১০টি অংশীদার শহর রয়েছে।
তিনি জানান, শহরটির বার্ষিক খুচরা বিক্রয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১.১ ট্রিলিয়ন আরএমবি ছাড়িয়েছে। ১৩৮তম ক্যান্টন ফেয়ার—চীনের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম বাণিজ্য প্রদর্শনী—এখনও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গুয়াংজু বর্তমানে বিশ্বে পণ্য পরিবহনে পঞ্চম ও কনটেইনার পরিচালনায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। পাশাপাশি শহরটির হাই-স্পিড রেলওয়ে নেটওয়ার্ক দেশব্যাপী যাত্রী পরিবহনে শীর্ষে।
এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ফর্চুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকাভুক্ত ৩৬৮টি কোম্পানি গুয়াংজুতে প্রায় দুই হাজার প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে।
লিউ গুয়াংজুর পাঁচটি শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন—এটি প্রায় ১.৯ কোটি জনসংখ্যার মহানগর, যেখানে ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬.৫ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে; এটি চীনের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি (জিডিপি ৩.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান); এটি একটি উদ্ভাবনকেন্দ্র, যেখানে ১৫ হাজার উচ্চপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ২৪টি ইউনিকর্ন কোম্পানি রয়েছে; এটি ২,২৩৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক রাজধানী; এবং এটি একটি সবুজ উন্নয়নের মডেল, যা জাতিসংঘ অনুমোদিত ‘লিভকম অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে।
ডিক্যাব প্রতিনিধিদল ২৯ অক্টোবর থেকে গুয়াংডং প্রদেশে এক সপ্তাহব্যাপী সফরে রয়েছে। সফরের অংশ হিসেবে তারা গুয়াংজু আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টার, পার্ল রিভার নাইট ক্রুজ, গুয়াংজু জিন শি হাসপাতাল, গুয়াংজু মেট্রো নির্মাণ প্রকল্প এবং ১৩৮তম ক্যান্টন ফেয়ার পরিদর্শন করেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান ও উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চীনের উদ্ভাবন, পরিবহন ও বাণিজ্য নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। জাতীয় পুনর্জাগরণ ও জনগণকেন্দ্রিক অগ্রগতির অভিন্ন লক্ষ্যে দুই দেশের সহযোগিতা আরও গভীর হবে।”
পাঠকের মন্তব্য