ঢাকা থেকে জানানো যায়, বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী খামার ও উৎপাদন বন্ধ রাখবে প্রান্তিক খামারিরা।
বিপিএর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্পোরেট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পোলট্রি খাত ধ্বংসের পথে। এই খাতের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে, যার মধ্যে ৪০% নারী ও ৬০% শিক্ষিত বেকার যুবক।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, সরকারের নীরবতা ও কর্পোরেট সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ফিডের দাম তিন বছর ধরে কমলেও, দেশের বাজারে তা উল্টো বেড়েছে।
দেশের কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া ফিডের বাজার দখল করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, যার ফলে ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন ক্ষতির মুখে পড়ছে এবং টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।
বিপিএর ৭ দফা দাবি:
১. কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে, ফিড, বাচ্চা, মেডিসিন ও ভ্যাকসিনের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করতে হবে।
২. কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত, ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৩. প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনকে নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের বাজারে নিয়মিত অডিট ও প্রকাশযোগ্য প্রতিবেদন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫. উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ১০% লাভ যুক্ত করে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নির্ধারণ করতে হবে।
৬. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ, প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিতে হবে।
৭. নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও কর্পোরেটপন্থী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিপিএর হুঁশিয়ারিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সকল জেলা ও উপজেলায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। দেশের সর্ববৃহৎ কৃষিভিত্তিক খাত এই সংকটমুখী অবস্থায় বিপিএ প্রান্তিক খামারির অধিকার ও শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে জোর দিচ্ছে।
এক প্রান্তিক খামারি বলেন,
“আমরা টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছি। ফিড ও ওষুধের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে আমাদের খামার বন্ধ হয়ে যাবে, পরিবারের রোজগার বন্ধ হবে। আমরা শুধু আমাদের জীবন ও পরিবার রক্ষা করতে চাই।”
মানবিক প্রেক্ষাপট:
পোলট্রি খাতের এই সংকট সরাসরি প্রভাব ফেলবে দশ লাখ মানুষের জীবিকার ওপর, বিশেষত নারী ও শিক্ষিত বেকার যুবকদের। যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে, খাদ্য উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যা সাধারণ মানুষ এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দাঁড়াবে।
পাঠকের মন্তব্য