বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছে হারিকেন মেলিসা। ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল (২৮২ কিমি) বেগে ছুটে আসছে এটি—ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার এক সুপার হারিকেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) সতর্ক করেছে, আগামী মঙ্গলবার সকালেই মেলিসা জ্যামাইকার স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ইতিমধ্যে দেশটিতে অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
ইতিহাসের রেকর্ড ভাঙতে পারে মেলিসা
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মেলিসা শুধু ২০২৫ সালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ই নয়, বরং জ্যামাইকার ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হতে পারে। ১৮৫১ সালে হারিকেন পর্যবেক্ষণের রেকর্ড শুরু হওয়ার পর এমন ভয়াবহ গতির ঝড় আর দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি ও সিবিএস।
এর আগে এই ঝড়ে হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকে চারজনের মৃত্যু হয়, ফলে মোট সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
ধীরগতি কিন্তু ধ্বংসাত্মক শক্তি
এনএইচসি জানিয়েছে, বর্তমানে হারিকেন মেলিসা রাজধানী কিংস্টন থেকে ১৪৫ মাইল (২৩৩ কিমি) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে এবং ঘণ্টায় মাত্র ৩ মাইল (৬ কিমি) গতিতে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমমুখে অগ্রসর হচ্ছে। এই ধীর গতি একে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে, কারণ এতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারি বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
এনএইচসি পরিচালক মাইকেল ব্রেনান সতর্ক করে বলেছেন—
“জ্যামাইকার মানুষদের অনুরোধ করছি, বাইরে বের হবেন না। মেলিসা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস ডেকে আনতে পারে, যা জীবননাশের কারণ হতে পারে।”
প্রস্তুত জ্যামাইকা, তবু আতঙ্ক বাড়ছে
সরকারি ঘোষণায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জ্যামাইকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছে, ঝড়ের আগেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে—যাদের মধ্যে দুজন বন্যার পানিতে ডুবে এবং একজন গাছ ভেঙে মারা গেছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস এক বিবৃতিতে বলেছেন—
“এটি জ্যামাইকার জন্য এক ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে, ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।”
বিপদের তিন মুখ
-
বিপর্যয়কর বন্যা – মেলিসার বিশাল বৃষ্টিপাত রাজধানী কিংস্টনসহ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।
-
ভূমিধসের আশঙ্কা – পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে।
-
জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্রতীরবর্তী ধ্বংস – উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে এনএইচসি সতর্ক করেছে।
বৈশ্বিক নজর
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা মেলিসাকে ঘিরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জাতিসংঘ ও রেড ক্রস জ্যামাইকায় জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিবিসি বলেছে, যদি মেলিসা বর্তমান গতি ও শক্তি ধরে রাখে, তবে এটি এ বছরের বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের এক ভয়াবহ উদাহরণ হয়ে উঠবে।
পাঠকের মন্তব্য