আইনি ভিত্তি ও জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের অর্থ “গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা” বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন— “আইনি কাঠামো ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া এনসিপি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না।”
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীতে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জুলাই সনদ নিয়ে শুধুমাত্র একটি চমকপ্রদ অনুষ্ঠান আয়োজনের দরকার নেই; বরং প্রয়োজন আইনি স্বীকৃতি ও জনগণের আস্থা।”
‘এটি জনগণের নয়, সরকারের সনদ’
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, জনগণকে না জানিয়ে এবং আলোচনার সুযোগ না রেখে জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করা সরকারের এক ধরনের ছলচাতুরী। তাঁর ভাষায়,
“জুলাই সনদের বিষয়গুলো এখনো অস্পষ্ট। জনগণ জানে না এতে কী আছে, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। অথচ সরকার কেবল অনুষ্ঠান আয়োজনেই ব্যস্ত। এটি জনগণের নয়, সরকারের সনদ হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের কাজ ছিল সনদের সব জটিলতা দূর করা, কিন্তু কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আর কোনো আলোচনার সুযোগ থাকবে না। “কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সমঝোতার পথ তৈরি করতে হবে, নইলে এই উদ্যোগও ব্যর্থ হবে,” যোগ করেন তিনি।
‘আন্দোলন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়’
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, “মানুষ আজ সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসানের জন্য আন্দোলন করছে। স্বাধীন চিন্তা, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে।”
তিনি মনে করেন, সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত না হলে তা ভবিষ্যতে নতুন দ্বন্দ্ব ও অনাস্থার জন্ম দেবে। “সনদ যদি আইনি ভিত্তি না পায়, তবে এটি আরেকটি রাজনৈতিক প্রতারণা হিসেবেই ইতিহাসে স্থান পাবে,” বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ
নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই গায়ের জোরে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কোনো সংস্কৃতি তারা বজায় রাখছে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হতে চাই, কিন্তু একতরফা সিদ্ধান্তের দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।”
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলীয় অবস্থান
নাহিদ জানান, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— এই সময়সীমা ধরে এনসিপি তাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। তবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হলে কোনো নির্বাচনেরই অর্থ নেই।”
নাহিদ আরও বলেন, “আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে মানুষ নিজের মত প্রকাশে মুক্ত থাকবে, ভয়-ভীতিহীনভাবে ভোট দিতে পারবে।”
মানবিক বার্তা ও নাগরিক আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনের শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি হওয়া উচিত একটি মানবিক চুক্তি— যেখানে থাকবে মানুষের ন্যায্য অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং প্রশাসনিক জবাবদিহি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সনদ যেন কারও স্বার্থের নয়, বরং সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার একটি বাস্তব পদক্ষেপ হয়।”
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির এই অবস্থান সরকারের জন্য একটি বড় বার্তা। কারণ, জুলাই সনদকে ঘিরে ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা গেলেও বিরোধী ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া এটি কার্যকর হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য