গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ী করে সাক্ষ্য দিয়েছেন এলজিআরডি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে আমার চোখের সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন।”
জবানবন্দিতে তিনি জানান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহারে চাপ দিতে থাকে। ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার সময় জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের সেখানে আনা হয়েছে। বলা হয়, আন্দোলন না থামালে আমাদের হত্যা করা হবে।”
চানখারপুলের ঘটনাটি স্মরণ করে তিনি বলেন, “সেদিন আমার সামনেই দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে জানতে পারি, সেখানে মোট ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান ব্যবহার করে গুলি চালায়। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই খবর আসে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।”
এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন আসিফ মাহমুদ।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজকের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।
প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীম। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
চানখারপুল হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল–১ ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে।
অভিযুক্তরা হলেন— সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
এর মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক এবং বাকি চারজন বর্তমানে গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন।
গত জুলাই–আগস্টে ছাত্র ও জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং প্রশাসনের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার এখন দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
পাঠকের মন্তব্য