পটল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদন বেশি হলেও মৌলভীবাজার ও সিলেট অঞ্চলে এ পর্যন্ত পটল সম্পূর্ণভাবে আমদানি নির্ভর ছিল। এবার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, সিলেট অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া পটল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পটল উৎপাদন প্রধান সময়। সাধারণত বারি পটল-১, বারি পটল-২ এবং বারি হাইব্রিড পটল-১ জাতের চাষ হয়ে থাকে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং পানি জমে না এমন বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি পটল চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
মৌলভীবাজার জেলায় এ ধরনের বন্যামুক্ত ও পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা সম্পন্ন জমি থাকা গবেষকরা জানিয়েছেন, এখানকার পরিবেশ পটল চাষের জন্য আদর্শ। জেলা সদরের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মাত্র তিন শতক জায়গায় একাধিক মাচাং তৈরি করে পটলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতি মাচাংয়ে পুরো মৌসুমে অন্তত তিন মণ বা ১২০ কেজি পটল সংগ্রহ সম্ভব।
কেন মৌলভীবাজারে পটল চাষ গুরুত্বপূর্ণ?
এ অঞ্চলে পটল সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে সিলেট বাজারে পটল আসে। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। গবেষকরা মনে করেন, স্থানীয়ভাবে পটল উৎপাদন শুরু হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, মূল্যও স্থিতিশীল হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।
মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, “সিলেট অঞ্চলের বাজারে যেসব পটল পাওয়া যায় তা সাধারণত উত্তরাঞ্চল থেকে আসে। পরিবহন জটিলতার কারণে ফসল ফেটে নষ্ট হয় এবং দাম অনেক বেশি। স্থানীয় উৎপাদন শুরু হলে সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চলের কৃষি।”
বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ
গবেষণায় দেখা গেছে, বারি-১ জাতের পটল চাষে ফলন আশানুরূপ। আগামী ২০২৬ সাল থেকে জেলা ভিত্তিক কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে পটল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে পুরো মৌলভীবাজার জেলায় পটল চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
ড. নজরুল বলেন, “পটল চাষ সম্প্রসারণ হলে স্থানীয় বাজারে পটলের সহজলভ্যতা বাড়বে, দামও কমে যাবে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।”
গবেষক দলের মতে, মৌলভীবাজারের মাটি, জলবায়ু এবং বন্যামুক্ত জমি পটল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক পরীক্ষায় সফল হওয়ায় এ অঞ্চলে পটল চাষ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা ।
পাঠকের মন্তব্য