খাগড়াছড়ির গুইমারায় ভয়াবহ সহিংসতার পর পরিস্থিতি শান্ত করতে জেলা প্রশাসন নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবির সমাধান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেফালিকা ত্রিপুরা, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েলসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিসি ইফতেখারুল ইসলাম জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি দাবির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে। তিনি বলেন, “দাবি-দাওয়া পূরণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে, তাই অবরোধ প্রত্যাহার জরুরি।”
পরিদর্শনকালে প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শোনে। জেলা প্রশাসক নিহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এই সহিংসতা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক; এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, নিহত তিনজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চাইলে মামলা করতে পারবেন, আর যদি তারা মামলা না করেন তবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যারা এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।”
উল্লেখ্য, রোববার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার ও আশপাশের এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। দোকানপাট, বাড়িঘর ও সরকারি-বেসরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সহিংসতায় সেনা কর্মকর্তা, পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের অনেকে আহত হয়েছেন।
গুইমারার মানুষ এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তবে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশার আলো জাগাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
পাঠকের মন্তব্য